Column

গুলাম আজমের দন্ডঃ সময়ের দাবি

গুলাম আজমের দন্ডঃ সময়ের দাবি

| | 04 Aug 2013, 12:55 pm
সদ্য দন্ডপ্রাপ্ত জামাত নেতা গুলাম আজমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় ১৯৯০ সালের ১লা অগাস্ট।এই তদন্তের দায়িত্বে ছিল যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থা।

 আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজমের বিরুদ্ধে বিধিসন্মতভাবে চার্জ গঠন করা হয় ২০১২ সালের ১লা থেকে ৩রা মে পর্যন্ত।কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে গত ১৫ই জুলাই রায় ঘোষণার মধ্যবর্তী সময়ের ভিতর নষ্ট হয়েছিল মূল্যবান তিনটি মাস। আজমের বিরুদ্ধে আনা সবক\'টি অভিযোগই আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। দোষের গুরুত্ব বিচারে যদিও মৃত্যুদন্ডই আজমের প্রাপ্য ছিল, তবু বয়সের কথা (৯০) বিবেচনা করে তাঁকে ৯০ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এই রায় আবার ক্ষুব্ধ করেছে সমাজের প্রগতিশীল অংশকে, বিশেষত তরুণদের, যাঁরা মনে করেন কোনও অপরাধীর শাস্তিদানের ক্ষেত্রে বয়স বিবেচ্য হওয়া উচিৎ নয়। কারন মানবতা বিরোধী জঘন্যতম অপরাধ করার আগে অপরাধী তার শিকারদের বয়সের কথা বিবেচনা করেনি।

 
এর আগে, ১৯৯২ সালে ঢাকার সুরাবর্দি গার্ডেনে যে \'পিপল\'স কোর্ট\' গঠন করা হয়েছিল, সেখানে প্রয়াত  জাহানারা বেগম যুদ্ধাপরাধের মুল নায়ক গুলাম আজমের জন্য কিন্তু চরম দন্ডই ঘোষণা করেছিলেন।
 
ক্ষমতায় আসার আগে বর্তমান শাসকদল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, সরকার গঠন করলে যে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতা-বিরোধী অপরাধের কলঙ্ক জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশের গায়ে লেগে রয়েছে, বিচারের ব্যবস্থা করে তা মোচন করা হবে। সরকার গঠন করে শাসকদল এখন তাদের সেই প্রতিশ্রুতি পালন করছে।
 
গুলাম আজমের ব্যাপারে রায় ঘোষণার আগে আর একজন কুখ্যাত রাজাকার এবং জামাত নেতা, আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাবাসের হুকুম হয়েছিল।আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে যুবসম্প্রদায় শাহবাগ স্কোয়ারে অবস্থানে করে সমস্ত দোষীদের মৃত্যুদন্ড দাবি করে একটি আন্দোলনের জন্ম দেন। অবশ্য গুলাম আজমের কারাদন্ডের আদেশের পরে একই প্রতিকৃয়া দেখা যায়নি।
 
অন্যদিকে তাদের নেতাদের বিচারের প্রতিবাদ করে জামাতের চালিয়ে যাওয়া আন্দোলনে ব্যহত হতে থাকল স্বাভাবিক জীবন। সম্প্রতি গুলাম আজমের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে জামাতের ডাকা দু\'দিনের দেশব্যাপী হরতালের সময় দলীয় কর্মীদের নির্বিচার হিংসার ঘটনায় নিহত হয়েছেন নজন মানুষ।এই ঘটনায় ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাননি। কিন্তু তাঁদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের অপেক্ষায় না থেকে জনগণ নিজেরাই এগিয়ে আসতে পারতেন। নিঃসন্দেহে এ কথা সত্যি যে আইন-শৃংখলা বজায় রাখা সরকারের কাজ। কিন্তু আপতকালীন সময় স্বাভাবিক জীবন বজায় রাখতে প্রশাসনকে সাহায্য করার জন্য মানুষের এগিয়ে আসা দরকার।
 
সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, দেশের সমস্ত যুদ্ধাপরাধীরা একজোট হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের স্বপক্ষে জনমত সংগঠন করার জন্য জামাত এবং হিফাজতের সঙ্গে যোগসাজসে এক ব্যাপক প্রচার অভিযান চালিয়েছে বি এন পি।আর এর পরিষ্কার প্রভাব পড়েছে পাঁচটি শহরের সাম্প্রতিক পুর নির্বাচনের ফলাফলের উপর। স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তিগুলিকে প্রতিরোধ করতে এখন সময় এসেছে দেশের প্রগতিশীল এবং স্বাধীনতাপ্রেমী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।তা না করলে এমন সময় আসবে, যখন  মুক্তি যোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারের মানুষজনের বিচারসভা বসিয়ে \'শাস্তি\' দেওয়া হতে পারে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য।