Column

হেফাজতের বদলে যাওয়া নীতি

হেফাজতের বদলে যাওয়া নীতি

| | 27 May 2013, 11:18 am
মওলানা ভাসানির ঐতিহাসিক লং মার্চের পর অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে দ্বিতীয় লং মার্চ সংগঠিত , করলেন হেফাজত-এ-ইসলামির নেতারা। মুসলমানদের ইসলামের ‘ইমান’ ও ‘আকিদা’ অর্থাৎ ইসলাম-নির্দিষ্ট বিশ্বাস এবং ইসলামি মতবাদ সম্পর্কে শিক্ষিত করতে ২০১০ সালের ১৯শে জানুয়ারি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে গঠিত হয়েছিল এই হেফাজত-এ-ইসলাম। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামি ভাবনাকে সমাজে সংঘবদ্ধ করা, ইসলামি মূল্যবোধের প্রসার ঘটান এবং দেশে ও বিদেশে সবরকম ইসলাম তথা মুসলমান-বিরোধী চক্রান্তের বিরোধিতা করা। মাননীয় আলেম এবং ইসলামি পন্ডিত আল্লামা শাহ আহমদ শফি, যিনি কাওয়ামি মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং প্রখ্যাত হাথেজারি মাদ্রাসার ডিরেকটর, এই সংগঠনের প্রধান।

 আল্লামা শফি জনগনের কাছে আবেদন করেন যে সব ইসলাম-বিরোধী ব্লগার গণজাগরন মঞ্চ গঠন হওয়ার পর ইসলাম এবং পয়গম্বরের ‘নিন্দা’ করছে, তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে। সংগঠনের অনুগামীদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে তিনি একটি ১৩-দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন, হেফাজতের লং মার্চ যার অন্যতম।  

 
সম্প্রতি অনলাইনে ‘মির্জা ফকরুল ইসলামিদের সঙ্গে হোটেল র‍্যাডিসনে দেখা করলেন—হেফাজত ও জামাতের মধ্যে টেলিফোনে গোপন কথোপকথন’—এই শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। এই খবর থেকে এটা স্পষ্ট লং মার্চের আড়ালে হাঙ্গামাকারীদের কাজে লাগিয়ে দেশে ব্যাপন নৈরাজ্য এবং গন্ডগোল সৃষ্টি করে সরকারের পতন ঘটানোর একটি পরিকল্পনা করা হয়েছিল। একজন প্রবীণ জামাত নেতা ঢাকায় একটি খবরের কাগজের দপ্তরে বসে একটি গোপন বৈঠক করেন। ঐ বৈঠকে যারা উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন হেফাজতের একজন নেতা, বিচারাধীন একজন যুদ্ধাপরাধীর পরিবারের কয়েকজন সদস্য, এবং সংবাদপত্রটির সম্পাদক। সেখানে  কী ভাবে লং মার্চ চলাকালীন ব্যাপক হিংসা এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায় তার বেশ কিছু উপায় সম্পর্কে আলোচনা হয়। যে সমস্ত পরিকল্পনা নিয়ে কথাবার্তা চলে, সেগুলি হল এইরকম যে, জামাত-কর্মীরা কিছু তরুনকে হত্যা করবে এবং কিছু মাদ্রাসা জ্বালিয়ে দেবে, নাস্তিক সেজে কিছু জামাত কর্মী পবিত্র কুর-আন পুড়িয়ে জনতাকে প্ররোচিত করবে, হিন্দু মন্দিরে আগুন লাগান হবে এবং যুদ্ধাপরাধ অভিযোগে অভিযুক্ত দু’একজনকে হত্যা করা হবে। ঠিক হয়, হেফাজতের আন্দোলনের জন্য আপাতত ৫০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। ঐ বৈঠকে হেফাজতের প্রধান দাবিগুলির তালিকায় নতুন একটি দাবি যুক্ত হয়। তা হল, বর্তমানে চলতে থাকা হিংসাত্মক আন্দোলোনে যুক্ত থাকার দায় ধৃত সমস্ত জামাত নেতা ও কর্মীর মুক্তি। হেফাজতের নেতারা অবশ্য জামাতের সঙ্গে তাঁদের কোনও ্যোগাযোগের কথা অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁদের আন্দোলন সম্পূর্ন অরাজনৈতিক।
 
হেফাজতের সমস্ত দাবি যদি মানতে হয়, তবে সমাজটাই সম্পূর্ন পালটে ফেলতে হয়—কোনও পশ্চিমী শিক্ষা নয়, কোনও সহ শিক্ষা নয়, পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে মেলামেশা বন্ধ আর কোনও রকম ভাস্কর্যকর্ম চলবেনা। দেশটাকে যে রকম বানাতে চাইছেন তাঁরা, মনে হয় সে সম্পর্কে হেফাজত নেতাদের নিজেদেরই কোনও পরিষ্কার ধারনা নেই।
 
মাননীয় আল্লামা শফি, দেশের মানুষ জানেন যে সমাজে  ইসলামি আদর্শ প্রচার এবং মূল্যবোধের প্রসার ঘটাতেই আপনার সংগঠন তৈরি হয়েছিল এবং সেখানে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিলনা। তাহলে কী করে আপনার এই সংগঠন আজ জামাত-শিবিরের চক্রান্তের অংশীদার হয়ে যুদ্ধাপরাধ বিচার বানচাল করার জন্য ব্যাপক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানর চক্রান্ত সমর্থন করছে ? অরাজনৈতিক সংগঠন হওয়েও কী করে হেফাজত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবি করছে ?