Column
Global Women’s Leadership Award for Sheikh Hasina
এ নিয়ে তাঁর প্রাপ্ত সম্মানের সংখ্যা দাঁড়াল তেত্রিশে। সিডনিতে আয়োজিত এক বর্নময় অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে এই সম্মানের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় আমেরিকার গ্লোবাল সামিট অফ উইমেনের পক্ষ থেকে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১৫০০ মহিলার প্রবল হর্ষধ্বনির মধ্যে গ্লোবাল সামিট অফ উইমেনের প্রেসিডেন্ট আইরিন নাতিভিদাদের হাত থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
{special_block_1}এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য,জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে গত বছর এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্র সংঘের প্রাক্তন সেক্রেটারি - জেনারেল ব্যান কি মুন এবং ইউনেস্কোর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল ইরিনা বোকভাও এই পুরস্কারের প্রাপক।
বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়নের প্রচেষ্টা গত দশ বছরে প্রশংসনীয় সাফল্য পেয়েছে। সারা বিশ্বে লিঙ্গ এবং মানব উন্নয়নের সূচক অনুযায়ী ক্রমাগতভাবে উপরের দিকে উঠেছে বাংলাদেশ।
লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে দক্ষিন এশিয় দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশকে উপর্যুপরি দ্বিতীয় বছর প্রথম স্থানে রেখেছে দ্য ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম (ডাবলু ই এফ)। লিঙ্গ বৈষম্যের ক্ষেত্রে ডাবলু ই এফ ২০১৭ সালে যে সূচক ধার্য করেছিল তাতে চারটি গুরুত্বপূর্ন জায়গায় বাংলাদেশের সাফল্যকে তুলে ধরা হয়েছিল: শিক্ষা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ, স্বাস্থ্য এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ণ। ডাবলু ই এফ- এর করা ক্রম অনুযায়ী মহিলাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে পৃথিবীর ১৫৫ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান সপ্তম। জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে স্থান ৪৭ তম।
বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে সকলের জন্যে বাধ্যতামূলক এবং অবৈতনিক করা হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ভর্তির শতাংশ ছিল ৯৮.৭। স্কুলে পড়ার জন্য মেয়েরা বারো ক্লাস অবধি স্টাইপেন্ড এবং স্কলারশিপ পায়। পাঠ্যবইও বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এর ফলে ক্লাসে মেয়েদের উপস্থিতি যথেষ্ট বেশি। উচ্চবিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র এবং ছাত্রী যথাক্রমে ৫৩ এবং ৪৭ শতাংশ, যা ২০০৯ সাল পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় নাটকীয় বৃদ্ধি। ঐ সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ থেকে ৬৫ শতাংশ। শিক্ষায় ছেলে এবং মেয়ের সমতা আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল- এর লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করেছে।
গত দশ বছরে সিভিল সার্ভিস, কর্পোরেট, ডেভেলপমেন্ট এবং এন্টারপ্রেনেউরশিপ ক্ষেত্রগুলিতে মেয়েদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শহর ও গ্রামাঞ্চল- দু জায়গাতেই কর্মোদ্যোগীদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। {special_block_2}
শেখ হাসিনা প্রথম আন্তর্জাতিক আলোকবৃত্তে আসেন, যখন ইউনেস্কো ১৯৮৮ সালে তাঁকে উফোয়ে-বোয়ানি ( Houphouet-Boigny) শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। এর এক বছর পরেই বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে দু'দশক ধরে চলা বিদ্রোহের অবসান ঘটে। সেই সময় থেকেই শেখ হাসিনা বিশ্বশান্তি, আবহাওয়া পরিবর্তন, নারী শিক্ষা, যুদ্ধাপরাধ বিচার, প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিশ্রুতি এবং দায়বদ্ধতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। এ ভাবে বাংলাদেশকে তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে এসে এক উচ্চস্থানে বসিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি, যেমন, আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্টেলিয়া, বেলজিয়াম এবং ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি দিয়ে শেখ হাসিনার অবদানকে স্বীকৃতি জানিয়েছে।
২০১০ সালে শেখ হাসিনা শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ন করায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের পুরস্কার পান। দেশের উন্নয়নের জন্য তাঁর ছেদহীন দায়বদ্ধতার জন্য তাঁকে আই সি টি সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
এই বছরের মার্চে উইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডাবলু আই পিঁ) এবং ইউনেস্কো তাঁকে দিয়েছে "ডাবলু আই পি ফোরাম অ্যাওয়ার্ড, দক্ষিন এবং দক্ষিন -পূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক স্তরে লিঙ্গ বৈষম্য কমানোর জন্য এবং সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সালে "ট্রি অফ পিস" পুরস্কার, বালিকা এবং মহিলাদের শিক্ষার প্রসারের জন্য। তিনি দু'বার সাউথ-সাউথ পুরস্কার পেয়েছেন- একবার ২০১১ সালে এবং আর একবার ২০১৩ সালে। এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ইনফরমেশন টেকনোলজি ব্যবহার করে শিশু এবং মায়েদের মৃত্যুহার কমানো এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবদানের জন্য।
যে সব পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন, সেগুলির মধ্যে আছে পার্ল এস বাক পুরস্কার (১৯৯৯), মাদার টেরিজা পুরস্কার, এম কে গান্ধি পুরস্কার, ইন্দিরা গান্ধি শান্তি পুরস্কার (২০০৯), ইন্দিরা গান্ধি গোল্ড প্লেক, হেড অফ স্টেট মেডাল, গ্লোবাল ডাইভার্সিটি অ্যাওয়ার্ড (২০১১, ২০১২) এবং নেতাজি মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৭) । আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্নতা আনায় তাঁর অবদানের জন্য ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বরে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এ সব ছাড়াও ইউ কে-র ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালবার্টা, ডান্ডি, ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনাকে লিবারেল আর্টসে সাম্মানিক ডক্টরেট দিয়েছিল, বোস্টন ইউনিভার্সিটি এবং জাপানের ওয়াসেডা ইউনিভার্সিটি দিয়েছিল সাম্মানিক ডক্টরেট অফ ল। ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ভূষিত করেছে দেশিকোত্তম উপাধিতে, আবার অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তাঁকে দিয়েছে সাম্মানিক ডক্টর অফ ল খেতাব (১৯৯৯)।
শান্তি, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদানের জন্য ২০০৫ সালে রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি শেখ হাসিনাকে সম্মানিত করেছে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রী দিয়ে। স্বদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দিয়েছে সাম্মানিক ডক্টর অফ ল। একই ধরনের সম্মান এসেছিল ব্রাসেলসের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির কাছ থেকে ২০০০ সালে।
চ্যাম্পিয়ন্স অফ দ্য আর্থ, পরিবেশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরে যা সর্বোচ্চ সম্মান, তা শেখ হাসিনা পেয়েছেন ২০১৫ সালে। এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশে পরিবেশ পরিবর্তনের বিষম প্রভাব রোখার কাজে তাঁর অবদানের জন্য। নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখার জোনয় ২০১৬ সালে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল "এজেন্ট অফ চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড" এবং "প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়নের সম্মান, যথাক্রমে গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম এবং দি ইউ এন উইমেনের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশের নারীরা এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন, শিক্ষা, প্রশাসন, স্বাস্থ্যপরিষেবা, সামরিক এবং আধা-সামরিক বাহিনী, রাজনীতি এবং ব্যবসায়ে অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ভূমিকা পালন করছেন। যে সব পুরস্কার শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়েছে, সেগুলি আসলে এসেছে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীদের অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে। শেখ হাসিনার প্রগতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস- এর বেশির ভাগ লক্ষ্যমাত্র পূরণের পথে, যে দলে দক্ষিণ এশিয়ার সামান্য কয়েকটি দেশই রয়েছে। সব থেকে বড় কথা, কিছু ক্ষেত্রে লক্ষ্যের থেকেও এগিয়ে বাংলাদেশ।