Column

হেফাজতে-ইসলামির লং মার্চের পিছনে কারা ?

হেফাজতে-ইসলামির লং মার্চের পিছনে কারা ?

| | 27 May 2013, 11:16 am
গত ৬ই এপ্রিল অশান্ত বাংলাদেশে কাওয়ামি মাদ্রাসা-ভিত্তিক চরমপন্থী সংগঠণ হেফাজত-এ-ইসলামি ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের শাস্তিসহ অন্যান্য দাবিতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অবধি লং মার্চ’ করে। তাদের এই কর্মসূচীর আগে প্রবল উত্তেজনা ও আশঙ্কায় কেঁপেছে দেশ। পরিস্থিতির আরও অবনতির সম্ভাবনা দেখা যায় যখন পালটা কর্মসূচী নিয়ে সন্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি এবং গণজাগরন মঞ্চ সহ ২৭ টি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগঠণ একই দিনে দেশজুড়ে হরতালের ডাক দেয়। তারও পালটা হিসেবে হেফাজতে-এ-ইসলাম আবার হুমকি দেয় এই বলে যে, যদি হরতালের ডাক ফিরিয়ে নেওয়া না হয়, তবে তারা পরের দিন থেকেই লাগাতার হরতাল করে যাবে। এই ধরনের সংঘর্ষময় পরিস্থিতি বিষম দুশ্চিন্তার কারন হয় দাঁড়ায় আর সন্ত্রস্ত মানুষ অপেক্ষায় থাকেন আরও রক্তপাত, আরও নৈরাজ্যের। বি এন পি-র নেতৃত্বাধীন জামাত-এ-ইসলামি সহ ১৮ দলের জোট হেফাজত-এ-ইসলামির এই লং মার্চকে সমর্থন জানিয়েছিল।

 জামাতের ‘বি’ টিম হিসেবে উঠে আসা হেফাজতের জন্ম সন্মন্ধে খুব সামান্য তথ্যই পাওয়া যায়। শুধু এইটুকুই জানা যায় যে, এই সংগঠণটি কাওয়ামি মাদ্রাসাগুলি থেকে কাজ করে। দু’ হাজার এক থেকে ছয় পর্যন্ত বি এন পি-জামাতের শাসনকালে কাওয়ামি  মাদ্রাসার ব্যাপক বাড়বাড়ন্ত দেখা গিয়েছিল। বাংলাদেশে বহু কাওয়ামি মাদ্রাসা জঙ্গি ইসলামি আদর্শ এবং জিহাদি কার্যকলাপের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে বলে খবর। একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় প্রকাশ পেয়েছে যে, এই ধরনের অনেক মাদ্রাসাই জঙ্গি ইসলামি শিবির তৈরি করেছে।আন্তর্জাতিক যোগাযোগ থাকা এই সব শিবিরে দেশে ইসলামি শাসন কায়েম করার উদ্দেশ্যে অস্ত্র শিক্ষা দেওয়া হয় বলে খবর। 

 
আমেরিকার নেতৃত্বে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকে ইসলামের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ বলে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল, তারই পরবর্তী ক্রিয়ায় এই সব মাদ্রাসাগুলিতে আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন এবং তালিবান নেতা মুল্লা ওমরকে ‘ইসলামের নায়ক’ হিসেবে বন্দনা করে অডিও এবং ভিডিও ক্যাসেট বিলি করা শুরু হয়। মাদ্রাসার ছাত্রদের বলা হয় এইসব নায়কদের পথ অনুসরণ করে বিধ্বংসী কাজকর্মে যুক্ত হতে। এ ছাড়াও ছাত্রদের মধ্যে ধর্মীয় আবেগ জাগিয়ে তুলে ইসলামের স্বার্থে সশস্ত্র জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্ররোচিত করতে ভিডিও ক্লিপিংগুলিতে কাশমির, গুজরাট এবং ভারতের অন্যান্য জায়গায় তথা আফগানিস্তান এবং ইরাকে মুসলমানদের উপর তথাকথিত অত্যাচারের ছবি দেখানো হয়। এইভাবে ছাত্রদের মধ্যে একটি পশ্চিম এবং ভারত-বিরোধী মানসিকতা তৈরি করা হয় এইসব প্রতিষ্ঠানগুলিতে।
 
কাওয়ামি মাদ্রাসাগুলি স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ভাষা শহীদ দিবস এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের মত দিনগুলি পালন করেনা। বস্তুতপক্ষে এইসব মাদ্রাসাগুলিতে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেওয়ার ঘটনাকে গৌরবান্বিত করে তাকে জিহাদের অঙ্গ বলে ছাত্রদের বোঝান হয়। এইসব প্রতিষ্ঠানগুলি কোনওদিনই কোনও উপলক্ষ্যেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেনা অথবা মাদ্রাসা অঙ্গনে ছাত্রদের জাতীয় সঙ্গীত গাইতেও দেয়না। জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এইসব মাদ্রাসার ছাত্র এবং শিক্ষকরা নারীদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় নেতাদের ‘ফতোয়া’-তে আস্থা রাখে। এন জি ও দের উন্নয়নমূলক কাজকর্ম, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা, পরিবার পরিকল্পনা, নারী স্বাধীনতা ও অগ্রগতি, নারী নেতৃত্ব, পশ্চিমী শিক্ষা, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কেও এরা বিরূপ এবং নেতিবাচক মতামত পোষন করে। এর কারন, এরা মনে করে এই সব কিছুই দেশে ইসলামি চরমপন্থা বিকাশের পরিপন্থী। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের জন্য এরা পশ্চিমী শিক্ষা, আধুনিকতা এবং মহিলাদের অগ্রগতিকে দায়ী বলে মনে করে।
 
যদিও পূর্ববর্তী বি এন পি-জামাত সরকার কাওয়ামি মাদ্রাসার দেওয়া ডিগ্রীকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। এর ফলে, এই সব মাদ্রাসা থেকে পাশ করে বের হওয়া ছাত্ররা মসজিদ অথবা মাদ্রাসা ছাড়া অন্য কোথাও কাজ পায়না এবং তাদের জীবন অতিবাহিত হয় হেফাজত সহ বিভিন্ন জঙ্গি ইসলামি সংগঠনের কর্মী হিসেবে, সারা দেশে, এমনকি বিদেশে—কাশমির, আফগানিস্তান এবং ইরাকের মত জায়গাতেও জিহাদি অথবা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে অংশ নিয়ে। এরাই ২০০৫ সালে দেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে ৬৩ টি জেলায় ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরনসহ ইসলামের নামে প্রায় সমস্ত সন্ত্রাসবাদী নাশকতায় যুক্ত ছিল। দেশে ইসলামি আইনের শাসনের প্রবর্তন দাবি করে এরাই বাংলাদেশে আত্মঘাতী মানব বোমা হয়ে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়েছে।
 
ব্যাপক আন্তর্জাতিক যোগাযোগ-সমৃদ্ধ এইসব মাদ্রাসাগুলি যে শুধুমাত্র জিহাদি তৈরি করে তা নয়, এরা বহু জঙ্গি ইসলামি সংগঠনগুলিকে তাদের সদস্যদের অস্ত্র শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেয়।  এই ধরনের বেশ কিছু অস্ত্র প্রশিক্ষন শিবির আছে চট্টগ্রামের দুরধিগম্য পার্বত্য এলাকায় অথবা ঘন জঙ্গলের ভিতর, যেখানে আইন রক্ষকরা সহজে পৌঁছোতে পারেনা এবং অস্ত্র শিক্ষা চলে রাতের অন্ধকারে। যে সব জঙ্গি সংগঠন এই সব মাদ্রাসার তরুনদের অস্ত্র শিক্ষা দেয় তাদের ভান্ডারে মজুত আছে বিপুল পরিমানে আধুনিক অস্ত্র এবং বারুদ। এমনকি পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরব এবং মধ্য প্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠনগুলির নেতারাও মাঝে মাঝেই এই সব মাদ্রাসাগুলি পরিদর্শন করেন এবং বাছাই করা ছাত্রদের ‘অ্যাডভান্স ট্রেনিং’-এর &