Column

আবার বি এন পি-র নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি

আবার বি এন পি-র নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি

| | 09 Jan 2018, 06:02 am
নিরপেক্ষ কোনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না করা হলে আগামী সংসদীয় নির্বাচন বয়কটের হুমকি দিয়েছেন বি এন পি-র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এই একই দাবিতে ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করেছিল বি এন পি, যার ফলে বর্তমান সংসদে তাদের কোনও প্রতিনিধি নেই।

"এই রাজনৈতিক সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচন হবেনা," ঢাকার সুরাবর্দি উদ্যানে সম্প্রতি একটি জনসভায় বলেছেন খালেদা জিয়া। তিনি দাবি করেছেন ২০১৮ অথবা ২০১৯ সালের প্রথম ভাগে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনটি একটি নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধানে হোক এবং সেই সময় সেনা মোতায়েন করে তাদের হাতে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হোক।

 

{special_block_1}সম্প্রতি একটি  বৈঠকে ইলেকশন কমিশনকে বি এন পি তাদের এই দাবি জানিয়েও দিয়েছে।  সেনা সমাবেশের দাবি খালেদা জিয়া এই প্রথম করছেন না।  বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর, ২০১২ সালে, 'রাজনৈতিক  বিশৃঙ্খলা'র অবসান ঘটাতে তিনি সেনা হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বি এন পি-কে কোনও রকম ছাড় না দিতে বদ্ধপরিকর থাকায় সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য সেনা বাহিনীই খালেদা জিয়ার শেষ ভরসা ছিল।


১৯৯৬ সালে বি এন পি অবাধ নির্বাচনের মুখোমুখি হতে  একগুঁয়ে অবস্থান নিয়ে প্রত্যাখ্যান করে। সেই সময়  গোটা গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পদদলিত করে ঠিক নির্বাচনের আগে তারা অতি গুরুত্বপূর্ন সব জায়গায় নিজেদের অনুগতদের নিয়োগ করে। এমনকি ভোটার লিস্টেও কারচুপি করে নির্বাচনের ফলাফলকে অবৈধভাবে নিজেদের পক্ষে প্রভাবিত করে জয়লাভ করে তারা।  এর ফলশ্রুতিতেই বাংলাদেশের সংবিধানে     কোনও দলহীন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

 

এরপর ২০১১ সালের মাঝামাঝি সুপ্রিম কোর্ট একটি রায়ে সংসদীয় নির্বাচনের তত্ত্বাবধানের জন্য কোনও অনির্বাচিত সরকার নিয়োগের  প্রথা এবং সেই উদ্দেশ্যে ত্রয়োদশ সংবিধান সংশোধনকে অবৈধ বলে ঘোষণা করলে এই প্রথার অবলুপ্তি ঘটে।{special_block_2}

 

বি এন পি বারংবারই বলে আসছে যে কোনও রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা হলে সেই নির্বাচন থেকে সরে আসবে তারা। তাদের যুক্তি, তা করলে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের অনুকূলে আনার জন্য কারচুপি করবে এবং সেই কারণেই সুষ্ঠূ নির্বাচন করতে হলে তা একটি দলহীন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই করা দরকার।

 

দেশে অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কী  কী  অত্যাবশ্যক? দেশজুড়ে নির্বাচনের সমস্ত দিক দেখার দায়িত্বসম্পন্ন একটি স্বনির্ভর  নির্বাচন কমিশন ছাড়াও অন্যান্য একান্ত জরুরী প্রতিষ্ঠানগুলি হল সাধারণ আদালত,  হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট। এছাড়া দরকার নিরপেক্ষ নজরদারি  সংগঠন  এবং সর্বোপরি, বিশাল এবং শক্তিশালী সংবাদমাধ্যম। .খালেদা জিয়ার তথাকথিত নিরপেক্ষ নির্বাচন সহায়ক প্রশাসন নয়, প্রকৃত স্বাবলম্বী এবং শক্তিশালী ইলেকশন কমিশনেরই প্রয়োজন  অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য।.

 

যখনই দেশে কোনও সাধারন নির্বাচন হয়, তখনই নিরপেক্ষ পরিদর্শকরা গোটা ব্যাপারটির তত্ত্বাবধান করেন। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু  হচ্ছে কি না, তা ঘুরে দেখার জন্য বিদেশ থেকে নামী ব্যক্তিত্বরাও আসেন। তাদের রিপোর্টের উপরেই নির্ভর করে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা। এর পরে শপথ গ্রহন করে নতুন সরকার পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকে। এই সময়কালে দেশের আইন অনুযায়ী বিভিন্ন কাজকর্ম চালানর পূর্ন ক্ষমতা তাদের হাতে থাকে। ক্ষমতায় আসার সময় যে সরকারকে সাংবিধানিক এবং আইনসঙ্গত বলে মান্য করা হয়েছে, সেই সরকারই আবার হঠাৎ করে বিশ্বাসের অযোগ্য এবং তার সংবিধানপ্রদত্ত শেষ দায়িত্ব -সাধারন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে যাওয়া--সে ব্যাপারে অযোগ্য হয়ে যেতে পারেনা।