Column

জামাতের অপকৌশল মানুষ বোঝেন

জামাতের অপকৌশল মানুষ বোঝেন

| | 27 May 2013, 11:29 am
যুদ্ধাপরাধ বিচারের আঁচ যখন একাত্তরের ঘাতকদের গায়ে লাগতে শুরু করেছে, জামাত-এ-ইসলামি তখন ভীত, সন্ত্রস্ত। ফাঁসির দড়ি দলের প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় নেতার গলায় চেপে বসতে পারে, এই ভয়ে জামাত ও তাদের ছাত্র সংগঠন, ইসলামি ছাত্র শিবির তাই যে কোনও মূল্যে বিচার বানচাল করে নেতাদের বাঁচানোর খেলায় নেমেছে।

 অন্যদিকে আবার গত ফেব্রুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখ ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল বরিষ্ঠ জামাত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাবাসের আদেশ দিলে ‘মৃত্যুদন্ডযোগ্য’ একজন সুপরিতিচ যুদ্ধাপরাধীর ‘লঘু শাস্তির’ প্রতিবাদে উত্তাল যুবসমাজ শাহবাগকে করে তুললেন এক দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনের সূতিকাগার।

 
যে হেতু শাহবাগের আন্দোলন দেশজুড়ে মানুষকে যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে পেরেছে, সেই হেতু আতঙ্কে দিশাহারা জামাত এবং তাদের ছাত্র ফ্রন্ট এই গণ বিক্ষোভের মোকাবিলা করে বিচার বন্ধ করে দিতে নানা কৌশল নিয়ে চলেছে।
 
এই সব অপচেষ্টার একটি হল ফেসবুক অথবা ব্লগে লাগাতার মিথ্যা প্রচার। যেমন জামাতের ফেসবুক পেজে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার নাম করে লেখা হয়েছে যে, শাহবাগের আন্দোলনকারীরা নাকি প্রজন্ম চত্বরে একটি মহিলাকে ধর্ষণ করেছে। বলা বাহুল্য, এটি সম্পূর্নভাবে একটি বানানো খবর। আনন্দবাজার পত্রিকায় কখনই এরকম কিছুই লেখা হয়নি।
 
‘এইটিন পার্টি কোয়ালিশন’ নামে এই ধরণের অন্য একটি ফেসবুক পেজে আবার বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলোর নাম করে এবং ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে যে, একটি তরুণ আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির অভিনয় করতে গিয়ে নিজেই ফাঁসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে। এই খবর প্রথম আলোয় ছাপা হয়নি, এবং এটি সত্যিও নয়। বানানো খবরকে বিশ্বাসযোগ্য করার চেষ্টায় ফোটোশপে তৈরি করা একটি ছবিও দেওয়া হয়েছিলে ঐ ফেসবুক পেজে। কিন্তু প্রথম আলোয় ছাপা আসল ছবিটি ছিল মোল্লা এবং অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীর চরম শাস্তির দাবিতে মুখর প্রতিবাদরত এক যুবকের।
 
জামাতের ফেসবুক পেজে ‘বাংলাসংবাদ২৪।কমের নাম নিয়ে আর একটি খবর পোস্ট করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, একজন মহিলা পুলিশ অফিসার আওয়ামী লীগের ছাত্র ফ্রন্ট ছাত্র লীগের কর্মীদের দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছেন। যে ছবিটি পোস্ট করা হয়েছে, তা আসলে ২০১১ সালের ৭ই জুলাই বি এন পির কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তরের কাছে কর্তব্যরত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এক মহিলা পুলিশ অফিসারের। 
 
জামাতপন্থী বলে পরিচিত ঢাকা থেকে প্রকাশিত বাংলা দৈনিক আমার দেশে ৬ই ডিসেম্বর, ২০১২ তারিখে ছাপা একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে কাবার যাজকবৃন্দ নাকি একটি মানব প্রাচীর তৈরি করে বাংলাদেশে ইসলামি পন্ডিতদের উপর ‘অত্যাচারের’ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এখানেও যে ছবি পোস্ট করা হয়েছে, তা একটি আরবি সাইট থেকে নেওয়া, যেখানে কাবার মসজিদ ঢেকে দেওয়া হচ্ছে, এরকম একটি ছবি দেওয়া হয়েছিল।
 
চলতি বছরের ৪ঠা মার্চ আমার দেশে ছাপা একটি রিপোর্টে বলা হয় শাহবাগ আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার নাকি একজন রাজাকারের পৌত্র। অবশ্য এর প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারের দাদুর গ্রামের মানুষ দৈনিকটিকে মিথ্যা খবর ছাপিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য নিন্দা করেন। ঐ গ্রামে বসবাসকারী সুপরিচিত স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সকলেই যৌথভাবে একটি বিবৃতি দিয়ে এই ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ খবরের নিন্দা করেছেন।
 
এইভাবেই ব্লগ লেখক ও শাহবাগ আন্দোলনের কর্মীদের ‘নাস্তিক’ এবং ‘ইসলামের শত্রু’ আখ্যা দিয়ে জামাত দেশজোড়া যুব আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি সুপরিচালিত প্রচারে নেমেছে। এরই ফলশ্রুতিতে এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখে ইসলামি ছাত্র শিবিরের গুন্ডারা কুপিয়ে হত্যা করে সুপরিচিত শাহবাগ আন্দোলন-কর্মী রাজীব হায়দারকে। ছাত্র শিবির ১৬ জন ব্লগারের একটি ‘হিট লিস্ট’ তৈরি করেছে বলে খবর।
 
দুষ্কর্ম করার সময় পুলিশ এবং নিরাপত্তাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করার কাজে জামাত এবং ছাত্র শিবির অতি দক্ষ। ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ দেশজুড়ে দলের ডাকা হরতাল পালনের সময় এরা নিরাপত্তাবাহিনীকে ধোঁকা দিতে নিজেদের ঘোরাফেরা এবং অস্ত্র চালানের জন্য অ্যামবুলেনস ব্যবহার করেছিল। এ ছাড়াও পুলিশকে আক্রমণের সময় তাদের ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের উদ্দেশ্যও ছিল মানুষকে বিভ্রান্ত করে ভাবতে বাধ্য করা যে, হামলাকারীরা ছিল আওয়ামী লীগের লোকজন। এইভাবেই মাদ্রাসা এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ব্যবহার করে তাদের হিংসাত্মক কার্যকলাপের সময় জামাত একাধিকবার পুলিশকে বোকা বানিয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধে মহিলা ও শিশুদের কাজে লাগিয়ে তাদের ঢাল হিসেবেও ব্যবহার করেছে জামাত।
 
মানুষের মধ্যে ধর্মীয় আবেগ উস্ক