Column

রুখতেই হবে দেশের শত্রু জামাতকে

রুখতেই হবে দেশের শত্রু জামাতকে

| | 27 May 2013, 11:45 am
পাকিস্তান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ১৯৪৭ সালে ভারতের বিভাজন হয়েছিল। ধর্মের ভিত্তিতে বেছে নেওয়া দু\'টি ভূখন্ড নিয়ে তৈরি হয়েছিল নতুন রাষ্ট্র। কিন্তু সংস্কৃতিগতভাবে বৈসাদৃশ্য ছাড়াও হাজার হাজার মাইলের ভৌগোলিক ব্যবধান এই দু\'টি অংশ--পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা করে রেখেছিল। পাকিস্তানের এই দু\'টি অংশের জনসংখ্যা প্রায় সমান হওয়া সত্ত্বেও প্রাধান্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তানেরই। এর ফলে দেখা দিল অর্থনৈতিক বৈষম্য । পূর্ব পাকিস্তানের যাবতীয় সম্পদ চালান করে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে কাজে লাগানো হতে থাকল। পূর্ব পাকিস্তান পড়ে রইল অবহেলিত হয়ে।

 পাকিস্তানের দু\'টি অংশে চলত বিভিন্ন ভাষা। পশ্চিমে চলত পাঞ্জাবি, সিন্ধি এবং ঊর্দূ, কিন্তু দেশের পূর্ব অংশের একমাত্র ভাষা ছিল বাংলা। উনিশশো আটচল্লিশ সালে একটি অর্ডিনান্সের মাধ্যমে ঊর্দূকে গোটা দেশের সরকারি ভাষা করা হলে পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং জোর করে ঊর্দূকে তাঁদের উপর চাপানোর এই চেষ্টায় সেখানকার মানুষ ক্রোধ প্রকাশ করেন। তাঁদের গড়ে তোলা ঊর্দূ-বিরোধী আন্দোলন পরিনত হয় পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের সঙ্গে একটি বৃহৎ সংঘর্ষে। এই আন্দোলন চলার সময়েই ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে তাঁদের মাতৃভাষা, বাংলার মর্যাদা রক্ষায় দলে দলে রাস্তায় নামা তরুণ তরুণীদের অনেকেই পুলিশের গুলিতে প্রান বিসর্জন দেন। পরবর্তীকালে ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। এই ভাষা আন্দোলনই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের অগ্রদূত। 

 
তৎকালীন পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লিতে সব মিলিয়ে ছিল মোট ৩১৩টি আসন, যার মধ্যে, জনসংখ্যার বিচারে, ১৬৯টি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের। উনিশশো সত্তর সালের সংসদীয় নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ১৬৭টি, অর্থাৎ সব থেকে বেশি সংখ্যার আসন। পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান হলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার। এই ধরনের সম্ভাবনা পাকিস্তান পিপল\'স পার্টির তৎকালীন নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টোর কাছে গ্রহনযোগ্য না হওয়ায় তিনি প্রস্তাব দিলেন পাকিস্তানের দুই অংশের জন্য দু\'জন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। কিন্তু এই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেয় আওয়ামী লীগ। এই বিষয়ে মীমাংসার জন্য দুই পক্ষের মধ্যে যাবতীয় আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় দেখা দিল নৈরাজ্য এবং তার ফলশ্রুতি হিসেবে পাকিস্তানে ঘোষিত হল সামরিক শাসন। 
 
এর পরে, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ, ঢাকায় সুরাবর্দী উদ্যানের  কাছে রেসকোর্স মাঠে শেখ মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তিনি বলেন, মানুষের এই সংগ্রাম পাকিস্তানের নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য স্বাধীনতার সংগ্রাম। তাঁর এই ভাষণ ছিল ঐতিহাসিক, কারন তা লক্ষ লক্ষ মানুষকে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিল। 
 
এবার এই আন্দোলনকে রুখতে পাকিস্তান দেশের পূর্বাঞ্চলে সৈন্যবাহিনী পাঠায় \'অপারেশন সার্চলাইট\' নামে এক সামরিক অভিযান চালানোর জন্য। সেনাবাহিনীর মধ্যে থাকা বাঙ্গালি সৈনিকদের হয় বসিয়ে দেওয়া হল, নয় হত্যা করা হল। মার্চ মাসের ২৫ তারিখের রাতে শুরু হল \'অপারেশন সার্চলাইট\' এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সাধারন নাগরিকদের উপর চালানো হতে থাকল জঘন্যতম পাশবিক অত্যাচার। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এর পরে আর কোনও  আলাপ-আলোচনায় সদর্থক কোনও ফল হবেনা বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিলেন। মার্চের ২৬ তারিখে একটি লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, "আজ থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাঙ্গালি সামরিক কর্মী, পুলিশ এবং ই পি আর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) দখলদারি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে  বীরত্বের সাথে লড়ছেন। স্বাধীনতার জন্যা আমাদের এই সংগ্রামে আল্লাহ আমাদের জয়ী করুন। জয় বাংলা।"
 
টেলিগ্রামের মাধ্যমে তাঁর এই ভাষণ পৌঁছল চট্টগ্রামে। মেজর জিয়াউর রহমান তখন সেখানে অবস্থিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কম্যান্ডিং অফিসার। কালুরঘাট রেডিও স্টেশন থেকে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন।প্রথমে একটি জাপানি জাহাজ এবং পরে রেডিও অস্ট্রেলিয়া ও বি বি সি বেতারের সেই ঘোষণা ধরে বাইরের জগতে সম্প্রচার করে। এর পরে বাংলাদেশ-ভারতের সীমানায় অবস্থিত মেহেরপুরে \'গভর্নমেন্ট অফ দ্য রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ\' নামে অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। তখন এই সরকারকে \'মুজিব নগর সরকার\'ও বলা হত। এবার নতুন রাষ্ট্রের জন্য গঠিত হল নতুন সেনাবাহিনী, যাতে যোগ দিলেন পাকিস্তানী বাহিনীতে থাকা বাঙ্গালি সৈনিক, পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীরা। বাংলাদেশের এই নবগঠিত সেনাবাহিনী দখলাদারি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু করল গেরিলা যুদ্ধ। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রাম সফল করতে প্রতিবেশী ভারত এগিয়ে এল আর্থিক, সামরিক এবং কূটনৈতিক সহায়তা নিয়ে। 
 
পূর্ব পাকিস্তানের এই স্বাধীনতা সংগ্রাম কিন্তু জামাত-এ-ইসলামির কঠিন প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল। এই সংগঠন থেকে গড়ে তোলা