Column

বাংলাদেশকে \'বাংলাস্তান\' বানানোর চেষ্টা

বাংলাদেশকে \'বাংলাস্তান\' বানানোর চেষ্টা

| | 27 May 2013, 11:24 am
\"এই উপমহাদেশে যদি আমরা (বাংলাদেশ) এবং পাকিস্তান এক হয়ে যাই, তবে \'মালাওন \'(অবমাননার্থে হিন্দু) অথবা \'নাসারাস\'(খ্রিষ্টান)দের নিয়ে আমাদের পরোয়া করতে হবেনা।আমরা আমাদের দেশের নাম রাখব ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাস্তান, কিম্বা আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে মিশে যাব, যেখানে শুধু মুসলমানরা বাস করবে,\" জানিয়েছে জামাত-এ-ইসলামির ফেসবুক পেজ \'বাঁশের কেল্লা।\'

 বাংলাদেশকে আর একটি পাকিস্তানে পরিনত করার এই অনুপ্রেরনার উৎস জামাত-গুরু এবং সংগঠনের প্রাক্তন আমির গুলাম আজম, বাংলাদেশের অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামীর উপর অকথ্য পাশবিক অত্যাচার চালানোর ব্যাপারে যাঁর ভূমিকা বিভিন্ন নথিপত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত।  যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বর্তমানে বিচারাধীন এই গুলাম আজম স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করার পরেও বেশ কয়েক বছর ধরে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করেছিলেন। লন্ডনে বসে \'ইস্ট পাকিস্তান রিট্রিভাল কমিটি\' গড়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অঙ্গ হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত সংগঠিত করতে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিলেন তিনি। 

 
বাংলাদেশের জন্মগ্রহনের পরে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া জামাত সহ পাকিস্তান-পন্থী যাবতীয় দল আবার ফিরে আসার সুযোগ পায় ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রের জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পরে। স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় এরা পাকিস্তানি দখলদারি বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে অসামরিক বাঙ্গালিদের হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ সহ অসামরিক বাঙ্গালি জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে চরমতম অপরাধ করেছিল। ে
 
এতকিছু সত্ত্বেও স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ায় যে শোচনীয় পরাজয় তাদের হয়েছিল, তারই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সমস্ত পাকিস্তান-পন্থী সংগঠনগুলি, বিশেষত জামাত,  মুখিয়ে ছিল। কোনও সময় নষ্ট না করে তারা চক্রান্ত ফাঁদতে শুরু করে এবং তারই ফলশ্রুতি হিসেবে ঘটে যায় শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ড।
 
      এর পরে টানা দু দশক ধরে একের পর এক যারাই ক্ষমতা দখল করেছে, তারাই অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক পরিকল্পনা অনুযায়ী চেষ্টা করে গেছে \'ইসলামিকরণ\' করে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের আদলে পুনর্গঠন করতে। ঢাকায় অবস্থিত পাক হাই কমিশন আই এস আই-এর কার্যকলাপের মূল কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায় এবং এই দীর্ঘ সময়কালের ভিতরে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা স্থানীয় ইসলামি শক্তিগুলির সাহায্যে বাংলাদেশ জুড়ে একটি পাকিস্তান-পন্থী চক্র গড়ে তোলে। 
 
জামাত এবং অন্যান্য পাকিস্তান-পন্থী শক্তিগুলি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা পুনর্বাসন পেয়ে পাকিস্তান-পন্থী আবেগ জাগিয়ে তুলতে শুরু করল। তবে এরা সবসময়েই তাদের চক্ষুশূল শেখ হাসিনা্র ব্যাপারে শঙ্কিত থাকত। বাংলাদেশে তাদের ব্যাপক ভিত্তি বাঁচিয়ে রাখতে যদিও আই এস আই শেখ হাসিনার সঙ্গে একটা বোঝাপড়ায় আসতে আগ্রহী ছিল, তবু আওয়ামী লীগ এবং মুজিবুর কন্যা--উভয়কেই তারা পাকিস্তানের দ্বিজাতি তও্বের শত্রু হিসেবেই মনে করত। এই শক্তিগুলিই বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের বদল ঘটিয়ে তাকে আর একটি পাকিস্তানে পরিনত করার সমস্ত রকম চেষ্টা করে যাচ্ছে।কারন তারা জানে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ধ্বংশ করে তাকে পাকিস্তানের অঙ্গ বানানো সম্ভব নয় এবং দেশের মানুষ এমন কোনও চেষ্টা মেনেও নেবেনা। 
 
উনিশশো সাতচল্লিশ সালে ভারত ভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ উর্দূকে তাঁদের ভাষা বলে মেনে নেননি। যে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে পাকিস্তানি নেতারা বাংলাভাষী মুসলমানদের মধ্যে ইসলামি উদ্দীপনা প্রসারের পরিপন্থী বলে মনে করতেন, সেগুলিকে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ত্যাগ করতে চাননি। সেই আবেগের তাড়নাতেই জোর করে উর্দূ চাপানোর প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ বাংলা ভাষা রক্ষায় রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিলেন, প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন অনেকে। উনিশশো বাহান্ন সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন ইসলামি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদকে পুনর্জাগরিত করে। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, ঢক্কা নিনাদের সঙ্গে প্রচারিত দ্বিজাতি তত্ত্ব আসলে একটি \'মিথ\' এবং ভাষার বন্ধন ধর্মের বন্ধনের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।  এই ভাষা আন্দোলন তীব্রতর হয় যখন পাকিস্তানি সরকার রবীন্দ্রনাথের কবিতা এবং গান নিষিদ্ধ করে।বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসাই মানুষকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য লড়াই করতে ঐক্যবদ্ধ করে। 
 
পরাজয় হজম করতে না পেরে জামাত এবং সমমনোভাবাপন্ন শক্তিগুলি বাংলা ভাষার ইসলামিকরণের লক্ষ্যে কাজ করে যেতে থাকে। তারা এক অদ্ভূত যুক্তি প্রচার করে--বাংলা ভাষার জন্ম সংস্কৃত থেকে এবং ল্যাটিনের সঙ্গে খ্রিষ্ট ধর্মের যে রকম সম্পর্ক, সেই রকম সংস্কৃত মানেই হিন্দু ধর্ম। কারন, এই ভাষা হিন্দু পুরোহিতরা ব্যবহার করেন এব