Column

যুদ্ধাপরাধে ট্রাইব্যুনালের রায়ে নীরব কেন বি এন পি!

যুদ্ধাপরাধে ট্রাইব্যুনালের রায়ে নীরব কেন বি এন পি!

| | 30 Jul 2013, 03:34 am
সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর থেকেই দাঁত-নখ দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করা জামাত-এ-ইসলামি প্রধান গোলাম আজম দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে প্রথমে পাকিস্তান এবং পরে বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরব এবং ইংল্যান্ডে বাস করেন।

 এর পরে তিনি দেশে ফেরেন রাষ্ট্রের জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পরে, যখন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে প্রথম সামরিক শাসন চলছে।জেনারেল জিয়াই গোলাম আজমের নাগরিকত্ব আবার ফিরিয়ে দেন। তার পর থেকে এই জামাত নেতা দীর্ঘদিন ধরে দেশেই থেকে গেছেন নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে যাবতীয় রাষ্ট্রীয় নিয়ম-কানুনকে অসম্মান করে।

এতাবৎ তাঁর নব্বই বছরের জীবনে এই ধর্মীয় নেতা অসংখ্য অপরাধ করেছেন। অকাট্য প্রমাণসহ তাঁর যাবতীয় জঘন্য দুষ্কর্মের বিশদ এখন দেশের মানুষের কাছে আসছে। মানবতা-বিরোধী অপরাধে তাঁর জড়িত থাকার এত সাক্ষ্য প্রমাণ ট্রাইব্যুনালের সামনে পেশ করা হয়েছে যে, তাঁর আইনজীবীরাও অসহায় বোধ করেছেন। ট্রাইব্যুনালে গোলাম আজমের বিচার চলার সময় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পাশবিক অত্যাচারের স্মৃতি আবার মানুষের মনে জেগে ওঠে। তিরিশ লক্ষেরও বেশি স্বাধীনতা সংগ্রামীকে হত্যা করা হয়েছিল সেই সময়, ধর্ষিতা হয়েছিলেন তিন লক্ষেরও বেশি মহিলা এবং তরুণী-কিশোরী। 

বিপুল সাক্ষ্য-প্রমাণের সামনে হতচকিত হয়ে যাওয়া গোলাম আজমের আইনজীবীরা তাঁর সপক্ষে আদালতকে শুধু এই কথাই বলতে পেরেছিলেন যে, তাঁদের মক্কেল এতগুলি অপরাধের একটি ঘটনাতেও জড়িত ছিলেননা। কিন্তু আদালতে বিচারক গোলাম আজমের নিজের স্বীকারোক্তি পড়ে শোনান। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ঘটা অজস্র মানবতা-বিরোধী অপরাধের পিছনে গোলাম আজমের ভূমিকা মূলত ছিল একজন ষড়যন্ত্রী এবং প্ররোচনাদাতার। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, গণহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া গণহত্যারই সমতুল।

স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যারা দেশের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তারা বেশিরভাগই ছিল পূর্বতন পূর্বপাকিস্তানের জামাত-এ-ইসলামির \'আমির\'। যইয়তাদের হাতে গড়া রাজাকার, আল বদর এবং আল শামসের দুষ্কর্মে জড়িত থাকাও সন্দেহাতীভাবে প্রমাণিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরে পালিয়ে থাকা গোলাম আজম বিদেশে বসে সদ্যোজাত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার জন্য ব্যাপক প্রচার চালিয়ে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশে ফিরে আসার পরে তাঁর নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়া এবং জামাতের আমির হিসেবে তাঁর অভিষেক, সবই ঘটেছিল লুকিয়ে চুরিয়ে। যদিও এতরকম জঘণ্য অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ডই গোলাম আজমের প্রাপ্য ছিলে, তবু তাঁর নব্বই বছর বয়সের কথা বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল তাঁর জন্য ৯০ বছর কারাবাসের সাজা ঘোষণা করেছে। দেশের মানুষ কিন্তু এতে খুশি নন। তাঁরা চান গোলাম আজমের ফাঁসি।তাঁরা চান কারাবাসের আদেশের বিরোধিতা করে এবং ফাঁসির দাবি জানিয়ে সরকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করুক।

 মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগে গোলাম আজমকে নিয়ে মোট আটজন জামাত নেতার বিচার চলছিল আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এ পর্যন্ত আদালত এঁদের মধ্যে তিনজনকে চরম দন্ড দিয়েছে। শেষ মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করা হয়েছে জামাত-এ-ইসলামির সেক্রেটারি জেনারেল আলি আহসাম মহম্মদ মোজাহিদের বিরুদ্ধে, ১৭ই জুলাই। মনে করা হচ্ছে, এই বিচার বাংলাদেশের অন্ধকারতম অধ্যায়ের উপর যবনিকা ফেলে সাংস্কৃতিক প্রভুত্বের অবসান ঘটাবে।

কিন্তু যা অতি আশ্চর্যের, তা হল বিরোধী দল বি এন পি, যারা দাবি করে তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, তারা আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের ব্যাপারে একটিবারের জন্যেও প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে মুখবন্ধ করে রয়েছে।কিছু বলুক বি এন পি!