Column

Land of impossible attainments

Land of impossible attainments

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 16 Nov 2018, 06:06 am
সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে এখন বলা হচ্ছে 'অসম্ভব অভীষ্ট সাধনের দেশ।' ক্ষুধা এবং দারিদ্র্য-মুক্ত সমাজের লক্ষ্যে মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোলস-নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যেই পূরণ করেছে এই দেশ।

দারিদ্র্য অপনয়ণে দেশের সাফল্য সারা পৃথিবীতে বহুল প্রশংসিত। এই স্বীকৃতি এতটাই যে, ২০২৫ সালের মধ্যে ক্ষুধা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে  আমেরিকায় যে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ হতে চলেছে, তাতে 'ফোকাল কান্ট্রি,' অর্থাৎ কেন্দ্র-দেশ হিসেবে তুলে  ধরা হচ্ছে বাংলাদেশকে।  ইয়োহানেস জুট, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কান্ট্রি ডিরেক্টর, বাংলাদেশ, বলেছেন, "সমস্ত প্রতিকূলতার মুখে দাঁড়িয়েও বাংলাদেশ গত দশ বছরে এক কোটি ষাট লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্যসীমার উপরে নিয়ে এসেছে এবং  কমিয়ে এনেছে অসাম্য। এ এক বিরল এবং অতি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।"
 

পনেরো কোটি  মানুষের দেশ বাংলাদেশের কাছে সব থেকে বড় আর্থ-সামাজিক চ্যালঞ্জ তার দারিদ্র্য । দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার সর্বাগ্রেই রয়েছে দারিদ্র্যমোচনের লক্ষ্য, যা সমস্ত পরিকল্পনার নথিপত্র থেকেই প্রতীয়মান হয়। স্বাধীনতার পর থেকে গত ৪৬ বছরে সেই বাংলাদেশ 'বটমলেস বাস্কেট', অর্থাৎ অন্তহীন অভাবের দেশ থেকে আজ পূর্নতার দিকে এগিয়ে চলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দারিদ্র্য হার কমিয়ে আনার ব্যাপারে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। দারিদ্র্য কমিয়ে আনার ব্যাপারে বর্তমান সরকারের অক্লান্ত প্রচেষ্টাই এই সাফল্যের কারণ। গত পাঁচ বছরে দারিদ্র্য কমে আসার রেখচিত্র খুঁটিয়ে দেখলে এ কথা মনে হয় যে, ২০২১ সাল, অর্থাৎ দেশের স্বাধীনতালাভের ৫০ তম বর্ষ উদযাপনকালের মধ্যেই অতি দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে বাংলাদেশ।
 

  দু' হাজার ন' সালে  যখন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন দেশে গরীব মানুষের সংখ্যা ছিল পাঁচ কোটি।  এর মধ্যে ২. ৮৮ কোটি মানুষই ছিলেন চরম গরীব। ঐ সময় থেকে সরকারের মেয়াদকাল, অর্থাৎ ২০১৪ সালের মধ্যে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার গড়ে ১.১৬ শতাংশ বাড়লেও গরীব এবং অতি গরীবের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩.৮৫ কোটি এবং ১.৫৭ কোটি। উল্লেখযোগ্য যে, অতি দরিদ্র্য সীমায় বাস করা মানুষদের ৪৫ শতাংশ উপরে তুলে আনা হয়েছে গত পাঁচ বছরে।
 

অনেক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েও দেশ অতি অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সাফল্যের দিক থেকে সারা বিশ্বে এক উদাহরণ হয়ে উঠেছে। জি ডি পি'র  সাধারণ হিসেবে দেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বে ৪৪তম এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সমতা ৩৩তম। পৃথিবীতে যে এগারোটি দেশের অর্থনীতির বিকাশ আসন্ন বলে মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। ইন্টারন্যাশনাল মানিটারই ফান্ডের বক্তব্য, ৭.১ শতাংশ বৃদ্ধি নিয়ে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অর্থিনীতির বৃদ্ধি ছিল পৃথিবীতে দ্বিতীয় দ্রুততম।  মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোলসের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে অন্যতম সফল কাহিনী গড়ে উন্নয়নশীল বিশ্বের আলোকবৃত্তে  উঠে আসা বাংলাদেশের সামনে এখন রয়েছে সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট অর্থাৎ ধারাবাহিক উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণের চ্যালেঞ্জ।
 

বাংলাদেশের এই জাতীয় জাগরণের যাত্রা শুরু হয়েছিল  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  নেতৃত্বে ২০০৯ সালে, তাঁর 'চার্টার অফ চেঞ্জ - ভিশন ২০২১' -এর উপর বিশাল ভাবে আস্থা জানানোর পর। নির্বাচনী ইস্তাহারে আওয়ামী লীগ তাদের এই পথদিশা ঘোষণা করে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই প্রচেষ্টা আরও জোরদার  হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে। এবার শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দেন দূর্বল পরিকাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক অলসতার এই দেশে কিছু দিকনির্দেশক সংস্কার সাধন করার। গভীর আর্থিক নীতি প্রণয়ন এবং বিদেশী লগ্নি  আকর্ষণ করা সেগুলির অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ঝটিতি বেগে সংস্কার সাধন করেছেন , বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের বৃদ্ধিক্ষমতা বিকাশের জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।  বর্তমান আর্থিক বছরে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হারকে ৭.২৪ শতাংশে রাখার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে বাংলাদেশ সরকার। জি ডি পি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ বাজারে জোরালো চাহিদা, বেশি রপ্তানি, লগ্নি এবং রেমিটেন্‌সের আশা করে বিশ্বব্যাংক আগামী দু'বছরের জন্য বাংলাদেশের এক উজ্জ্বল চিত্র এঁকেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান প্রতিবেদন, দ্য গ্লোবাল ইকোনোমিক প্রসপেক্টসে লেখা হয়েছে যে, জোরদার অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং শক্তিশালী রপ্তানির ফলে   বাংলাদেশে অর্থনৈ্তিক কর্মকান্ড ২০১৮-২০ সালে বছরে ৬.৭ শতাংশ  বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান ইকনমিস্ট জাহিদ হুসেন জানিয়েছেন, যে  ১৩৪  দেশ ৬.৪ শতাংশ বৃদ্ধি লাভ করবে বলে মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে ১৭তম।  টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৭ তম।
 

বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় এখন ১,৬১০ ডলার, যা দেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা সময় ছিল মাত্র ১৯ ডলার। একই সংগে দারিদ্র্যের হার ১৯৭৩-৭৪ সালের ৮২.৯ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২৪.৩ শতাংশ। অতি দারিদ্র্যের হার ১২.৯ শতাংশ (বাংলাদেশ ব্যুরো অফ স্ট্যাটিসটিক্স)। বিশ্লেষকদের অভিমত, একদা কৃষি নির্ভর অর্থনীতি থেকে আরও বেশি করে পরিষেবা এবং শিল্পমুখী অর্থনীতির রাস্তায় হাঁটার ফলেই এই সমৃদ্ধি।
 

এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের (এ ডি বি )  অনুমান ২০১৯ অর্থবর্ষে বাংলাদেশ ৭.৫  শতাংশ বৃদ্ধি অর্জন করবে, যদিও আগে তারা বলেছিল এই বৃদ্ধি হবে ৭.২ শতাংশ।  তাদের প্রধান প্রতিবেদন, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট আউটলুক,২০১৮-তে  এ ডি বি বলেছে, জনস্বার্থে উন্নততর লগ্নি এবং রেমিট্যান্স-নির্ভর মানুষের অধিক ভোগের কারণে তাদের আগের হিসেবের পরিবর্তন করা হয়েছে। অবশ্য ২০১৯ সালের জন্য সরকারি যে লক্ষ্যমাত্রা (৭.৮ শতাংশ) অথবা তার আগের বছর যে রেকর্ড বৃদ্ধি (৭.৮৬ শতাংশ), তার তুলনায় এই হিসেব অনেক কম।
 

উন্নয়ন বিষয়ক খ্যাতিমান বিশ্লেষক ডঃ জাইদ বখত্‌ মনে করেন, দু'টি কাঠামোগত পরিবর্তন- অর্থনীতিকে আরও উন্মুক্ত করা এবং দ্রুতহারে দারিদ্র্য কমিয়ে আনা-বাংলাদেশ সরকারকে আজকের সাফল্য অর্জনে সাহায্য করেছে। "জি ডি পি -তে আমদানি-রপ্তানির অবদান ২০ থেকে লাফিয়ে ৪০ শতাংশ হওয়ায় দেশের অর্থনীতি এখন অনেক খোলা," তিনি বলেছেন। অর্থনীতি বেশি করে উন্মুক্ত হওয়ার অর্থ  রপ্তানি এবং আমদানি দুই-ই উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশ আরও সক্ষম এবং প্রতিযোগী হয়ে উঠেছে।"  তিনি মনে করেন কৃষি, নারী ক্ষমতায়ন, গ্রামীণ অর্থনীতির সংস্কার, এনজিওদের ভূমিকা এবং ক্ষুদ্র ঋণ এই বিশাল মাত্রার দারিদ্র্য মোচনে সাহায্য করছে। তাঁর মতে জি ডি পি -তে কৃষির হ্রাসমান অংশও দারিদ্র্য অপনয়ণে সাহায্য করেছে।

 

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডঃ শামসুল আলম, যিনি জেনারেল ইকনমিক ডিভিশনের প্রধান এবং একজন প্রথম সারির চিন্তাবিদ, বলেছেন বাংলাদেশ দুর্দান্ত অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে, বিশেষত গত ন'বছরে, অনেক উত্থানপতন সত্ত্বেও। তাঁর বক্তব্য অনুসারে, দেশের জি ডি পি -তে  পরিষেবা ক্ষেত্রের অবদান এখন ৫৩ শতাংশ। এটা সম্ভব হয়েছে শিল্পের বৃদ্ধির ফলে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এ এক বিশাল পরিবর্তন। 
 

বাংলাদেশ এখন একটি নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ, যেখানে মাথাপিছু গড় আয় ১,৬১০ ডলার। বিশ্বব্যাংকের বেঁধে  দেওয়া মান অনুযায়ী মাথাপিছু আয়  পর পর তিন বছর ১,০৪৫ ডলার থাকলেই সে মধ্য আয়ের দেশের শ্রেণীভুক্ত হয়ে যাবে।  
 

সরকারের মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় এখনকার ১,৬১০ ডলার থেকে ৫,০০০ ডলার  হওয়ার কথা, যা  ২০৪১ সালের মধ্যে  প্রথমে ১২,০০০ ডলার এবং তারপর ১৫,০০০ ডলার হবে, ডঃ শামসুল আলম জানিয়েছেন। তা করতে গেলে সামাজিক এবং রাজনৈতিক স্থিতি রক্ষা এবং মানব দক্ষতাকে শিল্প-নির্ভর অর্থনীতির কাজে লাগানোই হবে সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, তিনি বলেছেন।

 

বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির আশা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর পরের সাধারণ নির্বাচনে  জয়ী হয়ে আবার সরকার গড়ে উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের অগ্রগতির ধারাবাহিকতাকে  বজায় রাখবেন। ২৭ শে সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সদর দপ্তরে শেখ হাসিনার সংগে  পৃথকভাবে মিলিত হওয়ার সময় তাঁরা এই আশা ব্যক্ত করেন।
 

এ কথা পরিষ্কার যে, দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বন্দোবস্ত করা এবং হিংসাত্মক তথা জঙ্গিবাদী কার্যকলাপ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার  জন্য ক্রমাগত ঊর্দ্ধমুখী হয়ে চলেছে তাঁর জনপ্রিয়তা। বিশ্বে মন্দা চলার মধ্যেও অর্থনৈতিক বৃদ্ধি অর্জন, মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোলস-এ সাফল্য, দারিদ্র্য অপনয়ণ এবং শক্ত হাতে জঙ্গি কার্যকলাপ দমনে বিরাট ভূমিকা পালন  করার জন্য বিশ্বের প্রধান নেতা-নেত্রীরা সকলেই  শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন শেখ হাসিনাকে।