Column

Sheikh Hasina Government nearing end of its second term

Sheikh Hasina Government nearing end of its second term

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 13 Jul 2018, 07:13 am
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তার দ্বিতীয় দফার শাসনকালের শেষ পর্যায়ে পৌঁছোতে চলেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে উপর্যুপরি দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করেছিল। পরবর্তী নির্বাচন হবে ২০১৮ সালের শেষ দিকে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রের প্রতিটি মাপকাঠিতেই  পরিকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য অপনয়ণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পুষ্টি, মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা এবং নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য  পেয়েছে।

 

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জি ডি পি এখন ৭.২৮ শতাংশ, ২০১৬-১৭ আর্থিক বর্ষে বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার বিলিয়ন ডলার এবং রফতানি আয় ৩৮.৫ বিলিয়ন ডলার। দেশ এখন নিম্ন-মধ্য আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাংকের মাপকাঠি অনুযায়ী যদি উপর্যুপরি তিন বছর ধরে মাথাপিছু আয় ১,০৪৫ ডলার থাকে, তাহলে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে পরিগণিত হবে। বর্তমানে দেশের মাথাপিছু আয় ১,৬১০ ডলার।

 

সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে একটি স্পন্দনশীল মধ্যবিত্ত সমাজের উত্থান ঘটেছে  এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা জনসংখ্যা কমেছে। বর্তমানে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা দেশের জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও কম, যা খালেদা  জিয়ার বি এন পি-শাসনকালের তুলনায় এক অতি উল্লেখযোগ্য  অগ্রগতি। সেই সময় জনসংখ্যার ৪২ শতাংশই ছিল চরম দরিদ্র্য (বাংলাদেশ ব্যুরো অফ  স্ট্যাটিসটিক্স)।

 

বর্তমান সরকারের 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' ভিশনের  কল্যাণে ১৬.২ কোটি মানুষের জীবন 'ডিজিটাল-নলেজ' নির্ভর সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছে। লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয় দেশগুলির শীর্ষে এবং নারী ক্ষমতায়নে বিশ্বে তার স্থান সপ্তমে (গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৬)।

 

দেশের কৃষিক্ষেত্রে বিশাল উন্নয়ন হয়েছে। প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদনে অভ্যন্তরীণ চাহিদা  সম্পূর্ন পূরণ করে দেশ এখন স্বনির্ভর। অর্থনীতিবিদদের অভিমত, একদা কৃষি-চালিত দেশ থেকে পরিষেবা এবং শিল্প-কেন্দ্রিক অর্থনীতিতে স্থানপরিবর্তনের ফলে দেশে আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে এবং বিদেশি অনুদান এবং আমদানির উপর নির্ভরতা কমেছে।

 

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সব থেকে বড় খবর, ন্যুনতম উন্নত দেশের স্তর থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উন্নীত  হতে চলেছে। খুব সম্ভবত ২০২৪ সালের মধ্যেই উন্নয়নশীল দেশের তকমা পেয়ে যাবে বাংলাদেশ।

 

সম্প্রতি বাংলাদেশ তার নিজস্ব উপগ্রহ 'বঙ্গবন্ধু - ১ উৎক্ষেপণ করেছে। উপগ্রহ উৎক্ষেপনকারী ৫৭তম দেশ বাংলাদেশ।

 

খালেদা জিয়ার শাসনকালে বাজেটের ৬০ শতাংশই আসত বিদেশ এবং কিছু সংস্থার অনুদান থেকে। এখন এ দেশের বার্ষিক বাজেটের ৯০ শতাংশই আসে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে, ৮ শতাংশ আসে সফট লোন এবং  দু' শতাংশ অনুদান হিসেবে (বাংলাদেশ ব্যুরো অফ স্ট্যাটিসটিক্স)।

 

বি এন পি-র শাসনকালে দূর্নীতি দেশব্যাপী রোগ এবং প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। বার্লিনের ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দূর্নীতির দিক থেকে  বাংলাদেশকে পৃথিবীর মধ্যে এক নম্বরে রেখেছিল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দূর্নীতি এখনও একটি বড় সমস্যা, কিন্তু খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়কালের মধ্যে পার্থক্য এই যে, এখন দূর্নীতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যা এর আগের জমানায় অভাবনীয় ছিল।

 

খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের শাসনকাল (২০০১-০৬) বি এন পি এবং তাদের মিত্রদলগুলির নানা রকম দুষ্কর্মের সাক্ষী। শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে আওয়ামী লীগের জনসভায় ২০০৪ সালের গ্রেনেড আক্রমণ, দেশজুড়ে একই সংগে বোমা বিস্ফোরণ, এ এস এম কিব্রিয়া এবং আশানুল্লা মাস্টার সহ বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা, দশ ট্রাক ভর্তি  অস্ত্র উদ্ধার এবং জাতীয় সম্পত্তির বেপরোয়া লুঠ এই ধরণের মাত্র কয়েকটি উদাহরণ, যাতে বি এন পি এবং তাদের মিত্র দলগুলির নেতারা জড়িত ছিলেন।

 

শেখ হাসিনা ক্ষমতার রাশ হাতে নেওয়ার সময় থেকে দেশের পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বি এন পি-র সময়কার ৪,৯০০ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫০০০ মেগাওয়াট। রুপপুরে রাশিয়ার সহায়তায় একটি নতুন আণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। ২,৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ১৩ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালের মধ্যে সম্পূর্ন হয়ে যাবে আশা করা যাচ্ছে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রভূত বৃদ্ধির ফলে  ৮৩ শতাংশ মানুষই এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। মাতাবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা রেলব্রিজ, মেট্রোরেল এবং অন্যান্য পরিকাঠামোগত প্রকল্পগুলিকে ত্বরান্বিত করা হয়েছে।
 

বর্তমান সরকারের সব থেকে বড় সাফল্যের কাহিনী শুরু হয় যখন বিশ্বব্যাংক অর্থসাহায্য দিতে অস্বীকার করার পর দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদকে ব্যবহার করেই পদ্মা রেল ব্রিজ নির্মাণ কাজে এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা। বহুমুখী এই ব্রিজ প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে এবং পঞ্চাশ ভাগ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্নও হয়েছে। চট্টগ্রামে কর্নফুলি নদীর ভিতর দিয়ে একটি সুড়ঙ্গ এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাজ চলছে। উন্নয়নের এই ধারা যদি অব্যহত থাকে, তাহলে  দেশ যখন তার ৫০তম স্বাধীনতাবার্ষিকী উদযাপন করবে, সেই ২০৫০ সালের মধ্যেই অর্থনৈতিক শক্তিধর এক নতুন দেশকে প্রত্যক্ষ করবে বিশ্ব।

 

এই সব কিছুর পাশাপাশি, যুদ্ধাপরাধ বিচারের ব্যবস্থা করে এবং ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে শেখ হাসিনা দেশের তিরিশ লক্ষ শহিদের পরিবারগুলির বহুদিনের ক্ষতে সান্ত্বনার প্রলেপ দিয়েছেন। সর্বোপরি, মায়ানমারে জাতিনিধনের ফলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা বহু হাজার রোহিংগিয়া উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার এক অনন্য নজির সৃষ্টি করার জন্য সারা বিশ্ব থেকে উচ্চ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। 

 

দেশের মঙ্গলের ব্যাপারে  আপসহীন অবস্থান নেওয়া এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘ যাত্রায় নামা শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের চাবিকাঠির বাহক। জাতিকে উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অবিসম্বাদী নেতা হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত শেখ হাসিনার কোনও বিকল্প দেশের সামনে নেই।