Column

 Tarique Rahman obtains asylum in UK

Tarique Rahman obtains asylum in UK

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 28 May 2018, 05:46 am
খালেদা জিয়ার পুত্র এবং বি এন পি-র চেয়ারম্যান তারিক রহমান, যিনি ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বাস করছেন, ইউ কে-র স্বরাষ্ট্র দপ্তরের কাছে প্রায় চার বছর আগে তাঁর বাংলাদেশি পাসপোর্ট জমা করে দিয়েছেন। তারিক রহমান, তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমান এবং কন্যা জাইমা রহমানের পাসপোর্ট এখন ইউ কে-র স্বরাষ্ট্র দপ্তর হয়ে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের হাতে চলে এসেছে।

সামরিক মদতে চলা তদারকি সরকারের সময়কালে তাঁর বিরুদ্ধে আনা দূর্নীতির মামলায় জামিন পাওয়ার পরেই ২০০৮ সালে তারিক লন্ডনে চলে যান। সেই থেকেই পরিবার নিয়ে লন্ডনের সম্পূর্ন আবাসিক একটি অঞ্চল-কিংস্টনে  থাকছেন তিনি। তাঁর আয়ের কোনও উৎস জানা নেই। এই রকম একটি অঞ্চলে বিলাসবহুল জীবন যাপন করার মত অর্থ তিনি কোথা থেকে পান, তা কোনও দিন প্রকাশ করা হয়নি।

 

 {special_block_1}দূর্নীতিবিরোধী অভিযান চলাকালীন  ২০০৭ সালের মার্চ মাসে গ্রেপ্তার হওয়া তারিক ২০০৮-এর সেপ্টেম্বরে জামিন পেয়েই ইংল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য চলে যান। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার শর্ত হিসেবে তাঁকে বি এন পি-র সিনিয়ার জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেলের পদ ছাড়তে হয়। বিস্ময়ের ব্যাপার, ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে, যখন তিনি বিদেশে, সেই সময় তাঁকে দলের সিনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট করা হয়। এরপর এখন, জিয়া অরফ্যানেজ ফান্ড তছরুপের জন্য  ৮ই ফেব্রুয়ারিতে খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারের পর তাঁকে বি এন পি-র অ্যাক্টিং প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে। এর আগে বি এন পি-র সংবিধান সংশোধন করে একটি নতুন ধারা যুক্ত করে বলা হয় যে, কেউ ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেও দলের যে কোনও পদে থাকতে পারবে।

 

লন্ডনে যাবার আগে তারিক বিশাল একটি দূর্নীতিতে তাঁর জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জনগণের থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ঢাকায় ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিজের দূর্নীতিতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তারিকের একটি স্বাক্ষরিত বিবৃতি  বাংলা দৈনিক মানবজমিনে ছাপা হয়েছিল। "জনগণের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থনা করছি," তারিক ওই বিবৃতিতে বলেছেন। এতে তারিক জানিয়েছেন কী ভাবে তিনি তাঁর ব্যবসায়ের অংশীদার এবং বন্ধু গিয়াসুদ্দিন আল মামুনের বিদেশি ব্যাংকে সঞ্চিত অবৈধ অর্থ ব্যবহার করেছেন। যদিও দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তারিক এই মর্মে একটি মুচলেকা দিয়েছিলেন যে, তিনি আর কোনও দিন রাজনীতি করবেন না, লন্ডনে পৌঁছনোর পরেই তিনি সক্রিয় রাজনীতি করতে শুরু করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল যে কোনও উপায়ে আওয়ামী লীগ-নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটানো।

 

এক ডজনেরও বেশি মামলায় ফেঁসে থাকা তারিকের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ২০১৬ সালে সাত বছরের কারাবাস এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানার শাস্তি ঘোষণা করে। একটি অর্থ তছরুপের মামলায় এই রায় দেওয়া হয়। অনাথদের জন্য তহবিল তছরুপের দায়েও তিনি তাঁর মা   খালেদা জিয়ার সংগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এই মামলায় তাঁর দশ বছরের জেল এবং দশ  কোটি টাকার জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়েছে। 

 

শুধুমাত্র চিকিৎসার জন তাঁকে জামিন দেওয়া এবং দেশের বাইরে চলে জাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও তাঁর চিকিৎসা এবং তাঁর স্বাস্থ্যের কোনও খবর জানা যায়নি এখন পর্যন্ত।  বাংলাদশে তাঁর উকিলরা সব সময় আদালতে বলে এসেছেন যে নি লন্ডনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অনেকগুলি দুর্নীতি মামলার সংগে সেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড আক্রমণের পরিকল্পনাকারী হিসেবেও বাংলাদেশ মামলা চলছে তাঁর বিরুদ্ধে।

 

ইংল্যান্ডে তারিক রহমানের অ্যাসাইলাম পাওয়ার বিষয়টি বি এন পি নেতারা গোপন রাখলেও উপ বিদেশমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট সমর্পন করে দেওয়ায় তারিক রহমান আর বাংলাদেশি নাগরিক নন। পাল্টা আক্রমণ করে বি এন পি আবার বলেছে যে, এ সব কিছুই জলজ্যান্ত মিথ্যা এবং কোনও পরমান থাকলে সরকার তা দেখাক। এর ঠিক পরের দিনই সাংবাদিকদের মন্ত্রী তারিক রহমানের পাসপোর্টের একটি কপি এবং তারিকের জমা দেওয়া পাসপোর্ট ফরোয়ার্ড করে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে পাঠানো ইউ কে হোম অফিসের একটি চিঠি দেখান।

 

কিন্তু বাংলাদেশি পাসপোর্ট সারেন্ডার করে ইউ কে-র কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার পর তারিক আদৌ যদি বাংলাদেশে ফিরতে চান, তাহলে আবার পাসপোর্ট ফিরে পেতে তাঁকে যথেষ্ট আইনি ঝামেলা পোহাতে হবে। আইন বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রথমে তাঁকে বাংলাদেশের আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে, তারপর যে সব অপরাধের জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন, তার জন্য জেলে যেতে হবে। এ ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে করা এক ডজনেরও বেশি মামলা রায়ের অপেক্ষায় আছে। {special_block_2}

 

দূর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজা পাওয়ার ফলে যদি খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের শেষের দিকে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত থাকতে হয়, তাহলে এখনই বিশৃঙ্খল বি এন পি  নেতৃত্বহীনতার সাংঘাতিক সংকটের মধ্যে পড়বে। পুত্রকে তাঁর পরে দলের নেতৃত্বে বসানোর যে পরিকল্পনা খালেদা জিয়া করেছিলেন, তা দারুণ বাধা পেয়েছে। মাতা-পুত্র দু'জনেই দূর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত এবং দু'জনেই মহা সংকটে। পাসপোর্ট সারেন্ডার করায় দেশে ফেরার মত কোনও বৈধ কাগজপত্র তারিকের কাছে নেই। এই অবস্থায় বি এন পিতে এমন কোনও নেতা এখন নেই যাঁর উপর নির্ভর করা যায় অথবা যিনি দলকে নতুন পথের দিশা দিতে পারবেন।

 

খালেদা জিয়া এবং তারিককে বাদ দিলে দলের অন্য উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্য থেকে মৌদুদ আহমেদের নাম উঠে আসে। তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন আগরতলা চক্রান্ত মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানের লিগাল টিমের সহযোগী হিসেবে। পরে তিনি জিয়াউর রহমানের বি এন পি-তে যোগ দেন এবং মন্ত্রী হন।  ১৯৮২ থেকে ১৯৯০, যে সময় জেনারেল এরশাদ ক্ষমতার মধ্যগগনে, মৌদুদ আহমেদ সেই সময় বি এন পি ছেড়ে এরশাদের দলে যোগ দিয়ে প্রথমে উপ প্রধানমন্ত্রী, তারপর প্রধানমন্ত্রী এবং অবশেষে এক সময় দেশের উপ রাষ্ট্রপতিও হয়ে যান।  এরশাদের স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতনের পর মৌদুদ নাটকীয়ভাবে ডিগবাজি খেয়ে আবার বি এন পি দলে যোগ দেন। জাতীয় স্তরের একটি দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মৌদুদের মত সুবিধাবাদী রাজনীতিকরা কখনওই বিশ্বাসভাজন হতে পারেন না।

 

আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে বি এন পি তাই নিদারুণ বিশৃঙ্খল অবস্থায় বলেই মনে হচ্ছে। তাদের নির্বাচনী ভবিষ্যতও অন্ধকার এবং অনিশ্চিত।