Bangladesh
Boiwala ends his journey
৯৮ বছর বয়সী পলান সরকার বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলুায় ভুগছিলেন। গত এক সপ্তাহ ধরেই বেশ অসুস্থ ছিলেন তিনি। সামাজসেবায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালে পালন সরকারকে একুশে পদকে ভূষিত করে। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯২১ সালে নাটোরে জন্ম নেওয়া পলান সরকারের আসল নাম হারেজ উদ্দিন। তবে স্থানীয়দের কাছে তিনি পলান সরকার নামেই পরিচিত। শৈশবে বাবাকে হারানো পলান আর্থিক সংকটে প্রাথমিকের পর আর পড়তে পারেননি। তবে তার বই পড়া কখনও থামেনি। কৈশোর শুরুর আগেই রাজশাহীর বাউসা গ্রামে নানা বাড়িতে পলানের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। ১৯৬২ সালে তিনি বাউসা ইউনিয়নে কর আদায়কারীর চাকরি পান। উত্তরাধিকার সূত্রে নানার কাছ থেকে পান সম্পত্তি।
তারুণ্যে এক যাত্রাদলে যোগ দিয়ে ভাঁড়ের চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন পলান সরকার। ওই সময় থেকেই তার বই পড়ার নেশা বাড়তে থাকে। ১৯৬৫ সালে বাউসা হারুন অর রসিদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় জমি দেওয়ায় তাকে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান করে নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রতিবছর স্কুলের মেধাতালিকায় যারা প্রথম দশটি স্থান পেত, তাদের ১৯৯০ সাল থেকে বই উপহার দেওয়ার নিয়ম চালু করেন পলান সরকার।
এরপর অন্য শিক্ষার্থীরাও বইয়ের আবদার করলে তিনি ঠিক করেন, বই তিনি সবাইকেই দেবেন, তবে তা পড়ে আবার ফেরত দিতে হবে। এভাবেই শুরু হয় পলান সরকারের বই পড়া আন্দোলন। ১৯৯২ সালে ডায়াবেটিস ধরা পড়লে নিয়ম করে হাঁটা শুরু করেন তিনি। তার সঙ্গেই তিনি যোগ করে নেন বই বিলি করার বিষয়টি। প্রতিদিন সকালে পায়ে হেঁটে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাড়ি বাড়ি নুুন বই দেওয়া আর পুরনো বই ফেরত নেওয়া শুরু করেন তিনি।
শুরুতে তার এই আন্দোলনের কথা রাজশাহীর কয়েকটি গ্রামের মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ২০০৬ সালে বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে পলান সরকারের নাম ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।