Bangladesh
French woman comes to Bangladesh for her love for Lalon
বিকেলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ এই মেলার উদ্বোধন করেন।
এবারের মেলার প্রধান আকর্ষণ ফ্রান্সের নাগরিক দেবোরা কিউকারম্যান। দর্শনে এমএ ডিগ্রি নিয়েছেন। দেশে থাকতে ছিলেন ইয়োগা শিক্ষক। শান্তির অন্বেষায় ঘুরেছেন বিশ্বের ১৩টি দেশ। সহচার্য পেয়েছেন নানা জাতের নানা ধর্মের মানুষের। কিন্ত কোথায়ও মন বসেনি। অবশেষে বাংলাদেশে এসে থিতু হয়েছেন লালনের আখড়ায়। বাংলাদেশে আসার পর বাউল সম্রাট লালন শাহ-এর জীবনদর্শন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে লালন দর্শনের প্রেমে পড়ে যান দেবোরা। আত্মিক শান্তির উদ্দেশ্যে এদেশে এসে তিনি প্রখ্যাত বাউল ফকির নহির শাহ-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছেন। তার কাছে দীক্ষা নিয়েছেন।
বাউলদের এই জীবনাচারে প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছেন তিনি। বাউল সম্রাট লালন শাহ-এর কথা শুনে কাছ থেকে লালনের জীবন ও দর্শন উপলব্ধি করার জন্য ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম বাংলাদেশে আসেন দেবোরা। এরপর থেকে বসবাস করছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায়। এর মধ্যে কয়েকবার ফ্রান্সে গেছেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে আর বেশি দিন থাকতে পারেননি। কয়েকদিন পরই লালনের প্রেমের টানে আবারও ফিরে এসেছেন লালন ধামে। জান্নাত বাংলা ভাষা শেখার পর তার সঙ্গে গুরুর ভাব-বিনিময় হয়। এরপর তিনি ধীরে ধীরে লালন দর্শনজ্ঞান গ্রহণ করেন।
যেমন কর্ম তেমন ফল উল্লেখ করে দেবোরা বলেন, লালন সাঁইজির দর্শন যারা মানেন, সাধনা করেন, তাদের সঙ্গে মিশতে হবে, জানতে হবে, বুঝতে হবে। তবেই সৃষ্টির এই বিস্ময় জানা সম্ভব হবে। ধর্মের চেয়ে সাঁইজির কাছে ছিল মানুষ বড়। ধর্ম কিংবা জাত-পাতের মধ্য দিয়ে নয়, ঈশ্বরকে পেতে হলে, তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে জানা দরকার সুপথের সন্ধান। তিনি আরও বলেন, লালন সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেই কুষ্টিয়ায় আসা। গুরুজি নহির শাহ-এর শিষ্যত্ব নিয়েছি। আমৃত্যু সাধুসঙ্গ নিয়ে বাংলাদেশে থাকতে চাই।
দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুরে ফকির নহির শাহ-এর আস্তানায় জান্নাতের বসবাস। কিছু দিন আগে এই আস্তানায় বসবাসকারী নহির শাহ-এর আরেক শিষ্য রাজনকে বিয়ে করেছেন দেবোরা জান্নাত। পেতেছেন সংসার। কারণ হিসেবে দেবোরা জান্নাত উল্লেখ করেন, সংসার হলো সমাজ, সংসার হলো ঘর। এই চিন্তা-চেতনা থেকে ঘর-সংসার করতেই গুরুজির শিষ্যকে বিয়ে করেছি। ফ্রান্সে আর ফিরে যাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দেবোরা জান্নাত বলেন, ‘আমি শান্তি খুঁজে পেয়েছি এদেশে, এই লালনের প্রেমে। তাই আমি আর ফিরে যাবো না ফ্রান্সে।’