Bangladesh
International Seminar on Rohingya trouble
‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট: টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে’ নামক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ‘ঢাকা ঘোষণা’য় এমন মন্তব্য করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ আয়োজিত দু’দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী দিনে সাবেক ও বর্তমান কূটনৈতিক, গবেষক এবং বাংলাদেশ সরকার ও বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এই ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন। তারা এই ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবি জানান।
ঢাকা ঘোষণায় বলা হয়, খুব দ্রুত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সম্মানজনকভাবে, সর্বজন স্বীকৃত এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী তাদের বিচারের আওতায় এনে রোহিঙ্গাদের পর্যাপ্ত মানবিক এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করতে হবে।
‘ঢাকা ঘোষণা’ বাংলাদেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা হয়। এই ঘোষণার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন এবং সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞরা সংহতি জানিয়েছেন। ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশ সরকার, মিয়ানমার সরকার, বিভিন্ন দেশের সরকার, জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে পাঠানো হবে। যাতে দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হয়।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দুদিনের সম্মেলন শেষে ‘ঢাকা ঘোষণা’য় ১৬টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, গ্লোবাল সামিট-২০০৫ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, জাতিংঘের চার্টার অনুসারে গণহত্যা এবং গণ- দেশান্তরের মতো পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের সুস্পষ্ট ঘোষণার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতেই হবে। এছাড়া, রোহিঙ্গা নারী, শিশু এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিতে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের যথাযথ কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত মানবিক এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদাানের আহ্বান জানানো হয় ঢাকা ঘোষণায়।
মিময়ানমারে চলমান গণহত্যা, গণসহিংসতা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং জাতিগত নিধনের ঘটনা ব্যাপক ও গভীরভাবে তদন্ত এবং দায়ী অপরাধীদের বিচার এবং রোহিঙ্গাদের আরও ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে ঢাকা ঘোষণায়। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত রাখতে আইন প্রণয়নসহ সবার জন্য নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও রক্ষায় মিয়ানমারের দায়িত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়।
অধিবেশনে কথা বলেন যুক্তরাজ্যে বার্মিজ রোহিঙ্গা সংগঠনের সভাপতি তুন কিন। একসময় তিনি মিয়ানমারে বসবাস করতেন। তাকেও দেশ ছাড়তে হয়। তিনি বলেন, ‘১৯৮২ সালের পর থেকে মিয়ানমারে আমরা পরগাছার মতো বসবাস করেছি। রোহিঙ্গাদের অধিকার বলতে কিছু নেই। আইনগতভাবে সেখানে আমরা বিয়ে করতে পারি না। চাকরি করতে পারি না। পড়াশুনা করতে পারি না। আমরা সেখানের নাগরিক নই। আইন করে আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন তারা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা আমাদের হত্যা করেছে। আমি জানি না, কোন মানবিকতায় এই কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব সময় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন চলে। জনসম্মুখে কথাও বলতে পারে না রোহিঙ্গারা। এতকিছুর পরও আমরা আমাদের জমিতে টিকেছিলাম। তবে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট শেষ পেরেক মারলো মিয়ানমার সরকার। গণহত্যা চালালো আমাদের উপর।