Bangladesh
Krishnapur Tragedy observed
১৯৭১ সালের এই দিনে লাখাই উপজেলার হাওর এলাকার অবহেলিত কৃষ্ণপুর গ্রামে ১২৭ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। পঙ্গুত্ববরণ করে এখনও বেচে আছেন আরও অন্তত ১৫/২০জন। কৃষ্ণপুরের পার্শ্ববর্তী চন্ডিপুর। ১৬টি বাড়ি ছিল সেখানে। ৭১ সালে পাক বাহিনী সবকটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এখন সেখানে একটি পুকুর রয়েছে। গ্রামের ছিটেফোটাও নেই।
স্থানীয়রা জানান, খেলু রাজাকার ও লাল খাঁ রাজাকার মিলিত হয়ে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে অবস্থানকারী হানাদার বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে কৃষ্ণপুর গ্রামের ১২৭জনকে হত্যা করে। অষ্টগ্রামের খান সেনারা কৃষ্ণপুর গ্রামে ভোর বেলায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা লাখাই উপজেলায় অবস্থানকারী খান সেনারা বা শান্তি কমিটির কেউ জানত না।
এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, হানাদার বাহিনীর গুলিতে কে কোনদিকে মরছে তা দেখার উপায় ছিল না। চোখ বেধে লোকজনকে মারপিট করা হয়। ব্রাশফায়ারের মাধ্যমে হত্যার পর লাশ গুলো ভাসিয়ে দেয়া হয় পানিতে। লাশ কোথায় গেছে তা কেউ জানে না। লাশের গলায় কলসি বা ইট বেঁধে লাশ গুলো পাশের নদীতে ফেলা দেয়া হয়। সৎকার করার কোনো লোক ছিল না গ্রামে। তাছাড়া তখন বর্ষা ছিল। লাশ গুলো কোথায় রাখা যাবে? তাই আমরা লাশ গুলোকে এক এক করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছি। একজন স্বজনের লাশ সৎকার না করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া যে কত কষ্টের তা আমরা ছাড়া আর কে বুঝবে?
কৃষ্ণপুর গ্রামে গেলে দেখা মিলবে কারও হাত নেই, কারও পা নেই, কারও বা আবার পিঠে মাত্র অর্ধেক মেরুদন্ড। ভুড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পরও কিভাবে ৪৭ বছর বেঁচে থাকা যায় কৃষ্ণপুর না গেলে বোঝার উপায় নাই। একজন মহিলা কিভাবে সারিবদ্ধ লাশকে এক জায়গায় করে নিজের সন্তানের খোঁজ নিয়েছেন তাও জানা যাবে কৃষ্ণপুর গেলে। এমন সাহসী নারীও রয়েছেন যিনি লাশগুলো সৎকার করতে না পেরে একে একে লাশের গলায় কলসী বেঁধে ও ইট বেঁেধ সেগুলো পার্শ্ববর্তী নদীতে ফেলে দিয়েছেন পরিবেশ দুষন হবে এই আশংকায়।
কৃষ্ণপুরের গণহত্যার জন্য দায়ী করা হয় মুড়াকরি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীকে। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালে মামলা হয়েছে। চলছে স্বাক্ষ্য গ্রহণ। এরই মধ্যে গোপনে বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন লিয়াকত আলী।