Bangladesh

Lalon' speech to be part of Mangal Jatra

Lalon' speech to be part of Mangal Jatra

| | 05 Apr 2018, 12:02 am
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা এপ্রিল ৫ : আসন্ন পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে লালনের অমর বাণী ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’।

এই বার্তা নিয়েই বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

 

মানুষের প্রতি ভক্তি থাকলে নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে নেওয়া যায়। অন্যের শ্রদ্ধা নিজের জন্য অধিকতর সম্মান বয়ে আনে বলেই লালন বলেছেন– ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’। সোনার মানুষ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশ গড়াও সম্ভব নয়।


এ বিষয়ে জাতীয় বৈশাখ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক এবং চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘নতুন বছরের প্রথম দিনে আমাদের কামনাটা কী, সেটিই আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রার ব্যানারে লিখি।

 

আমরা চেষ্টা করি, আমাদের দেশের কোনও মহান ব্যক্তি, কোনও সাহিত্যিক বা কোনও দার্শনিকের একটা বাণী শোভাযাত্রায় ব্যবহার করার।

 

গতবছর রবীন্দ্রাথ ঠাকুর এসেছেন, এর আগের বছর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা এসেছে। সে তুলনায় আমাদের কাছে মনে হয়েছে লালন তো একটা বিশাল ব্যাপার। আমরা চেষ্টা করে দেখলাম লালনের কোনও গুরুত্বপূর্ণ বাণী খুঁজে পাই কিনা, যা এ মুহূর্তে দেশ এবং মানুষের জন্য প্রয়োজন। সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতে আমাদের কাছে মনে হয়েছে ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ এই বাণীটি ব্যবহার করা যায়।’


চারুকলার শিক্ষার্থীরা এখন ব্যস্ত নানা শিল্পকর্ম নিয়ে। কেউ বানাচ্ছেন মাটির তৈরি অশুভ শক্তির প্রতীকী মুখোশ, কেউ কাগজ কেটে তৈরি করছেন পেঁচার প্রতিকৃতি, কেউ বানাচ্ছেন হাতি, ঘোড়া, আর কেউ রং করছেন তাতে। আবার কেউ কেউ চারুকলার খোলা জায়গায় কাঠের বৃহৎ প্রতিকৃতি তৈরির কাজ করছেন।

 

কাঠের প্রতিকৃতিতে ফুটিয়ে তুলছেন মাছ ও বক, একজন নারী পায়রা ওড়াচ্ছেন, সাইকেলে কৃষক ও তার কোলে শিশু, জেলের মাছ ধরা, পানিতে মাথা ভাসিয়ে রাখা মহিষ ইত্যাদি। কাগজ দিয়ে হাতে ধরার এবং ঝুলানোর মতো বিভিন্ন প্রতিকৃতিও বানাচ্ছেন তারা।


বাঙালির নববর্ষ উদযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হওয়া এ মঙ্গল শোভাযাত্রাকে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ইনট্যানজিবল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষতে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর এ স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কারণ হলো, এই শোভাযাত্রা অশুভকে দূর করা, সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

 

এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালির ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতিগত সব ধরনের বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত হয়।


ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কারণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়ও মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৩ সদস্যের একটি দল কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার ওপর ওয়ার্কশপ করাতে যায়। সেখানে বিভিন্ন মোটিফ তৈরির কৌশল, ধর্মনিরপেক্ষ জিনিসগুলো নিয়ে চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী সাইদুল হক জুইসসহ আরও দুজন সেখানে ওয়ার্কশপ করাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক নিসার হোসেন।

 

তিনি বলেন, ‘চারুকলার সাবেক ডিন অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক্ আলভীর মঙ্গল শোভাযাত্রা গবেষণা ও প্রসার কমিটি আছে। তারই উদ্যোগে তিন সদস্যের দলটি কলকাতা গেছে। এটার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো কলকাতার মানুষও যেন নিজেরাই শোভাযাত্রার জিনিসগুলো তৈরি করতে পারে।’

 

Image: Wikimedia Commons