Bangladesh

Last tributes paid to photographer Hossein

Last tributes paid to photographer Hossein

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 03 Dec 2018, 05:18 am
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ডিসেম্বর ৩: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোকচিত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সর্বস্তরের মানুষ।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তার মরদেহ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে রাখা হলে সর্বস্তরের মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। এ সময় আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মারিয়াম হোসেন এবং দুই ছেলে আকাশ হোসেন ও মেঘদূত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।


বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক  লিয়াকত আলী লাকি বলেন, আনোয়ার হোসেনের আগমন আলোকচিত্রী হিসেবে হলেও চলচ্চিত্রকে তিনি যেভাবে মর্যাদা দিয়েছেন, দেশের চলচ্চিত্র জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হওয়ার জন্য তার যে মেধা-মনন-পরিশ্রম যেভাবে যুক্ত হয়েছে, তাতে আমরা গর্বিত, আমরা আনন্দিত।


নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, আনোয়ার হোসেন যেন চলচ্চিত্রে কবিতা লিখতেন। গল্পকে অতিক্রম করে প্রকৃতি এবং মানুষকে একিভূত করে তিনি যে কাজটি করেছেন, সেটি আসলে আমাদের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ। 


চিত্রপরিচালক মোরশেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের আলোকচিত্রকে একটা বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার খ্যাতির জন্য দেশের তরুণরাও আলোকচিত্রে আগ্রহী হয়েছেন। আলোকচিত্রে অসামান্য একটা ভূমিকা রেখেছেন তিনি। এছাড়া তিনি যখন চলচ্চিত্র গ্রাহক হিসেবে কাজ শুরু করলেন, তখনও আমরা তার সৃজনশীলতার পরিচয় পাই।


সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, এত মানুষের ভালোবাসায় আমাদের প্রিয় শিল্পী সিক্ত হবেন, এটি কল্পনাই করা যায় না। মানুষের প্রতি যারা নিবেদিত থাকেন, মানুষ তাদের প্রতিদান সময় মতোই দিয়ে দেয়। অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসায় তিনি আজ সে প্রতিদান পেলেন।
পরিবাবরে পক্ষ থেকে শিল্পীর মামাতো ভাই ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সবেমাত্র যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এমন সময় উনি একবার গ্রামে গেলেন। এরপর গ্রামের সকল কিশোর-কিশোরীদের একত্রিত করে সর্বপ্রথম তিনি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত শেখালেন। আমরা গোল হয়ে বসতাম, আর আনোয়ার ভাই শেখাতেন- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।
এর আগে বীর এই মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।


মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত জায়গায় আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেনকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস।


ফ্রান্সপ্রবাসী আনোয়ার হোসেন গত ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশে আসেন। শনিবার সকালে পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হেভেন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।


আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৬ই অক্টোবর পুরান ঢাকার আগা নবাব দেউড়িতে। বেড়ার ঘরের মাঝখান দিয়ে একজন মানুষের চলার উপযোগী সরু পথ গিয়েছে, এমন পরিবেশে বেড়ে উঠা তার। বাবা কাজ করতেন সিনেমা অফিসে। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকলেও পড়ালেখার প্রতি আনোয়ার হোসেনের এতটাই টান ছিল, প্রতিদিন ভোর চারটায় পড়তে বসতেন। সকাল হয়ে এলে পাড়ার ছেলেরা হাজির হতো। তাদের সঙ্গে হাফ হাঁটে যেতেন বস্তা নিয়ে। সেখানে গাছ চেরা ছোট টুকরো সংগ্রহ করতেন তিনি। সেগুলো বস্তাপ্রতি আট-নয় আনায় বিক্রি হতো। সেখান থেকে ফিরে বাজার করতেন, তারপর যেতেন স্কুলে।  মাধ্যমিক পরীক্ষায় বোর্ডে তৃতীয় হয়েছিলেন তিনি। নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হয়েছিলেন বুয়েটের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে। সেখানেও ভালো ফল করেন। তবে একসময় সিনেমাটোগ্রাফি পড়তে চলে যান ভারতে।


১৯৬৭ সালে মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে কেনা প্রথম ক্যামেরা দিয়ে তার আলোকচিত্রী জীবনের শুরু। প্রথম সাত বছর ধার করা ক্যামেরা আর চলচ্চিত্রের ধার করা ফিল্ম দিয়ে তিনি কাজ চালান। ওই ফিল্মগুলো ছিল সাদাকালো। তিনি ৩৬ টাকা ব্যয়ে রঙিন ছবি তোলা শুরু করেন ১৯৬৯ সালে। পরবর্তী ২০ বছর আলোকচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন।


তিনি সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এই পাঁচ ছবি হলো হলো- ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’, ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, ‘পুরস্কার’, ‘অন্য জীবন’ ও ‘লালসালু’। 


কমনওয়েলথ গোল্ড মেডেলসহ ৬৮টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ১৯৯৫ সালে ফ্রান্সে চলে যান আনোয়ার হোসেন। ১৯৯৬ সালে ফরাসি মেয়ে মারিয়ামকে বিয়ে করেন তিনি।