Bangladesh
আন্তর্জাতিক মহলেও জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে হাসিনা লড়াইয়ের ডাক দিলেন
গুলাশানে একটি রেস্তোরাঁয় হামলায় এক নিমেষে প্রাণ হারান ২০ জন মানুষ। এদের মধ্যে দেশের ছাড়াও বিদেশী মানুষজন ও ছিলেন।
তবে, আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টি হয়তো করেছিল এই ঘটনা। কিন্তু সেই ভয়ের পরিবেশে একটি দেশের মানুষকে লড়ে এই সমস্যার উত্তর বার করবার পথে সাহায্য করেন প্রধানমন্ত্রী নিজে।
নামটি ওনার শেখ হাসিনা।
গুলশান হামলার পর থেকে ওনার সরকার একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে চেষ্টা করেছেন এই সমস্যার মোকাবিলা করতে।
বার বার মানুষকে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বলেছেন যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
তবে আজ আর শুধু দেশের মাটিতে নয়, হাসিনা বিশ্ব দরবারে মানুষকে আহ্বান করছেন এই সমস্যার সমাধান বার করবার জন্য।
সব দেশের মানুষকে এক সাথে লড়তে আহ্বান করেছেন উনি।
হাসিনা বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে তারা যেন সন্ত্রাসীদের অর্থ, অস্ত্রশস্ত্র ও নৈতিক সমর্থন না দেন।
এই কথাগুলি উনি আজ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে নিজের ভাষণে বলেছেন।
নিজের বক্তব্য বাংলায় বলে, হাসিনা বলেন যে বাংলাদেশ মনে করে যে সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম, বর্ণ বা গোত্র নেই।
"এদের সর্বতোভাবে সমূলে উৎপাটন করার সংকল্পে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে," হাসিনা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী সবাইকে আহ্বান করেন বলেন যে আগামীদিনে সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে।
উনি আরও বলেন যে এই সন্ত্রাসীদের পরামর্শদাতা, মূল পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী এবং প্রশিক্ষকদের খুজে বার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন আছে।
উনি বলেন যে ওনার সরকার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাস করে।
গুলশান হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে উনি বলেনঃ "আমরা এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি।"
বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্য পৃথিবীজুড়ে শান্তি স্থাপনের পথের এগোনোর বার্তা দিয়ে উনি বলেনঃ "এক মানবতার জন্য কাজ করার উদ্দেশ্যে আমরা সকলে এখানে সমবেত হয়েছি। মতের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আসুন আমরা মানবতার স্বার্থে অভিন্ন অবস্থানে উপনীত হই। বিশ্ব থেকে সংঘাত দূর করে শান্তির পথে এগিয়ে যাই।"
কানাডার সফর শেষে, হাসিনা এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে আছেন।
তবে শুধু এই মঞ্চে না। হাসিনা সরকার এই মুহূর্তে পাকিস্তানকেও কড়া বার্তা পাঠিয়েছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।
নিজের দেশের মাটিতে দুতি জঙ্গি হামাল হয়েছে গত কিছু মাসে। আর সেই ঘটনার কিছু মাস পরে ভারতের কাশ্মিরে আরেক জঙ্গি হামলায় ১৮ জন সেনা জোয়ান প্রাণ হারানোর পড়ে বাংলাদেশ জানিয়ে দিয়েছেন তারা জঙ্গি দমনের লড়াইয়ে প্রতিবেশী দেশের পাশে থাকবেন।
কাশ্মীরের উরি সেনাছাউনিতে রোববার হামলার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ ভারতীয় জোয়ান।
এই ঘটনায় ভারত আবার পাকিস্তানের হাত আছে বলে দাবি করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ দেশের নেতারা আজ দফায় দফায় বৈঠক করেন।
সেই দেশের সংবাদ মাধ্যম সুত্রে শেষ খবর জানা গেছে যে আন্তর্জাতিক স্তরে সর্বত্র পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে ভারত।
আর এই মুহূর্তে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা সরকার।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী ভারতের সিএনএন -নিউজ ১৮ চ্যানেলকে সাক্ষাৎকারে বলেছেনঃ "১৯৭১ সালের একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতীয়দের পাশাপাশি থেকে আমরা যুদ্ধ করেছি। "
"১৯৭১ সালের চেতনা আমাদের সম্পর্কে যাতে থাকে,সেইটা চাই আমি," উনি বলেন।
উনি আরও জানান যে যদি আগামী দিনে ঘটনাক্রমে ভারত পাকিস্তানকে সামরিকভাবে আঘাত হানার সিদ্ধান্ত নেয়, সেই ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে উচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে বৈঠকের শেষেই পরামর্শ করা হবে।
বিষয়টিকে 'স্পর্শকাতর' আখ্যা দিয়ে, উনি বলেনঃ "এখন এটা কাল্পনিক। তবে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশি ও তাঁর পাশাপাশি মিত্র ও বন্ধু হিসেবে আমরা এক সাথে এই ব্যাপারে কাজ করব।"
উনি বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার জঙ্গিবাদের প্রতি এই দেশের ভাবনা পরিষ্কার করেছেন।
"সন্ত্রাসের প্রতি আমাদের শূন্য সহনশীলতার নীতি রয়েছে," উনি বলেন।
আলী বলেন এই 'কঠিন' সময় ভারতের পাশে থাকবে বাংলাদেশ।
এই ভাবে আজ আবার একবার বাংলাদেশ জঙ্গি দমনে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছে।
গুলশান হামলার পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের লড়াইয়ের বিষয়টি পরিষ্কার করেছিলেন।
একই সাথে আজ একবার বাংলাদেশ ভারতের পাশে থাকার কথাটি বলে, পাকিস্তানকে কড়া জবাব দিয়েছেন।
কিছুদিন আগে নয় একটি বিষয়েও বাংলাদেশ পাকিস্তানকে আবার একবার কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবার পর থেকে পকিস্তান আবার একবার এই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় মতামত দেয়।
তবে সেই বিষয়, বাংলাদেশ উচিত উত্তর দিয়ে পাকিস্তানকে তাদের আপত্তি পরিষ্কার করে দেন।
বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার সামিনা মেহতাবকে তলব করেন।
মেহতাবকে নিজের কার্যালয় তলব করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুল হাসান।
পরে এই সাক্ষাৎ এর পরে, উনি সাংবাদিকদের জানানঃ "মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পাকিস্তান যে মতামত দিয়েছে, সেটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল।"
" এ নিয়ে পাকিস্তানের মতামত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই," উনি বলেন।
গত ৩ তারিখ রাতে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা করবার জন্য আগে আপিল করেছিলেন এই একাত্তরের গুপ্তঘাতক কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর নেতা।
এই রায়টি দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ।