Bangladesh
Mother commits suicide in Dhaka after killing two daughters
ঢাকা, ১ মে ২০১৮ : মানসিক অবসাদের কারণে দুই শিশু কন্যাকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন জেসমিন আক্তার নামে এক কর্মজীবী নারী। এমনটিই ধারণা করছেন পরিবারের সদস্যরা এবং পুলিশ। রাজধানীর মিরপুরে বাংলা কলেজের পাশে সরকারি কলোনির একটি বাসা থেকে সোমবার রাতে তিনজনের লাশ এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, জেসমিন আক্তার (৩৫) নামে ওই নারী দুই মেয়েকে গলাকেটে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন। নিহত শিশুরা হল হিমি (৯) ও হানি (৬)। দুই মেয়ে ও স্বজনদের নিয়ে পাইকপাড়া ‘সি টাইপ কলোনি’তে স্বামীর নামে বরাদ্দ ফ্লাটে থাকতেন তারা। পুলিশের ধারণা হতাশা থেকেই এমন নির্মম হত্যাকান্ড সংঘটিত হতে পারে। পরিবারের বক্তব্যও একই। তারা বলেন, ‘জেসমিন ছিলেন হতাশাগ্রস্ত। কোনো কিছুতেই মানসিক স্বস্তি অনুভব করতেন না। স্বামী-স্ত্রী দুজনই সরকারি চাকরি করায় দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে তিনি ছিলেন হতাশায়। এছাড়া অনেক দিন ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। এ কারণে দুই শিশুকন্যাকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।’
জেসমিন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কোষাধ্যক্ষ পদে চাকরি করতেন। তাঁর স্বামী হাসিবুল ইসলাম জাতীয় সংসদের সহকারী লেজিসলেটিভ ড্রাফটম্যান হিসেবে কর্মরত। হাসিবুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের ভজনপুর গ্রামে। জেসমিনের বাবার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে।
জেসমিনের স্বামী জানান, তার স্ত্রী অসুস্থতা থেকে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার বিকাল ৫টার দিকে কর্মস্থল থেকে ফিরে তাদের শোবার ঘর ভেতর থেকে বন্ধ দেখতে পান। অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ এসে লাশ তিনটি উদ্ধার করে। তিনজনেরই গলা কাটা এবং জেসমিনের গলার সঙ্গে পেটেও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশ জানায়, যেখানে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে বাইরে থেকে এসে কোনো লোক দিয়ে ঘটানো একেবারেই অসম্ভব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুপুর ৩টার দিকে দুপুরের খাবার খেয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে শোবার ঘরে ছিলেন জেসমিন। অন্য ঘরে জেসমিনের ভাইসহ অন্য স্বজনরা ছিলেন। তারা কোনোরূপ শব্দ বা চিৎকার শুনতে পাননি।
মানসিক সমস্যা থেকে জেসমিন ২৫ দিন আগে মেয়েদের অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খাওয়াতে গিয়েছিলেন বলে পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছে। এক মেয়েকে খাওয়ানোর পর অন্য মেয়েকে খাওয়ানোর সময় পরিবারের সদস্যরা টের পেয়ে যান। যে মেয়েকে খাইয়েছিল, তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়।
জেসমিন আক্তারের সঙ্গে একই বাসায় বসবাস করে আসছিলেন তার ছোট ভাই শাহিনুর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার বোনের মাইগ্রেনের সমস্যা ছিল। গত মাসেও ঘুমের ওষুধ খেয়ে মরতে চেয়েছিল। সবসময় দুশ্চিন্তা করতো। মানসিক চাপে থাকতো। আপার মানসিক সমস্যার কারণে চিকিৎসা চলছিল কলকাতায়। প্রায় নির্ঘুম কাটাতেন তিনি। আবার কখনও অঘোরে ঘুমাতেন। মাঝেমধ্যে অসংলগ্ন ও এলোমেলো কথা বলতেন।’
ময়না তদন্তের পর লাশ হাসিবুলের গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানা গেছে।
ক্যপশান: দুই সন্তান সহ হাসিবুল ও জেসমিন, ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে নেয়া