Bangladesh

Nipa to be buried after four years

Nipa to be buried after four years

| | 12 Apr 2018, 12:19 pm
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, এপ্রিল ১২: মরেও নিস্কৃতি পাচ্ছিলেন না নীপা। দীর্ঘ ৪ বছর তার লাশ হাসপাতালের মর্গে (হিম ঘরে) ছিল।

লাশের দাবি নিয়ে বাবা ও শ^শুরের মামলা পাল্টা মামলায় পার হয়েছে ৪ বছর।

 

অবশেষে ইসলামিক রীতি অনুযায়ী দাফন করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

 

পাশাপাশি দাফনের পূর্বে তার পরিবারকে লাশ দেখার সুযোগ করে দিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

একইসঙ্গে আদালতের এই আদেশ লিখিত আকারে হাতে পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে স্থানীয় জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।


চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

 

আদালতে নীপার বাবার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সমীর মজুমদার। অন্যদিকে  নীপার শ^শুরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ কে এম বদরুদ্দোজা।


জানা যায়, নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের খামার বমুনিয়া গ্রামের অক্ষয় কুমার রায়ের মেয়ে নীপা রানী রায়ের (২০) সঙ্গে একই উপজেলার পূর্ব বোড়াগাড়ী গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমায়ুন ফরিদ লাজুর (২৩) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর পালিয়ে যান।

 

পরে নীলফামারী নোটারি পাবলিক ক্লাবের মাধ্যমে অ্যাভিডেভিটে দুই লাখ ১ হাজার ৫০১ টাকা দেনমোহরে হুমায়ুন ফরিদ লাজুকে বিয়ে করেন তিনি।

 

এরআগে নীপা রানী রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ও মোছা. হোসনে আরা বেগম লাইজু নাম নেন।

 

নীপার বাবা অক্ষয় কুমার রায় এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন এবং ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বাদী হয়ে নীলফামারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

 

মামলার পর স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ের সকল কাগজপত্রসহ আদালতে হাজির হয়ে জবানবন্দি প্রদান করেন নীপা। আদালত সার্বিক বিবেচনায় অপহরণ মামলাটি খারিজ করে দেন।

 


নীপার বাবা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে তার মেয়েকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও মস্তিকৃবিকৃত (পাগল) দাবি করে আদালতে কাগজপত্র দাখিল করেন।

 

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষার জন্য রাজশাহী সেফ হোমে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।


এই টানাপোড়েনের মধ্যে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি হুমায়ূন ফরিদ ওরফে লাজু ইসলাম বিষপান করে আত্মহত্যা করেন।

 

লাজুর আত্মহত্যার ঘটনা আদালতে উপস্থাপন করে মেয়ের বাবা মেয়েকে (নীপা রানী ওরফে মোছা. হোসনে আরা বেগম লাইজু) নিজ জিম্মায় নিতে আদালতে আবেদন করেন।

 

আদালত তা মঞ্জুর করলে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে বাবা তার বাড়িতে নিজ জিম্মায় রাখেন। তবে মেয়েকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও মস্তিস্কবিকৃত (পাগল) দাবি করে আদালতে আগে যে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল সেটি চলমান থেকে যায়।

 


২০১৪ সালের ১০ মার্চ কীটনাশক পান করেন নীপা। পরে তাকে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে তিনি মারা যান। ডোমার থানা পুলিশ হাসপাতাল থেকে মেয়েটির মরদেহ রাতেই উদ্ধার করে।

 


পরদিন (১১মার্চ) নীলফামারী জেলার মর্গে মেয়েটির মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর পুত্রবধূ দাবি করে তার শ্বশুড় জহুরুল ইসলাম ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক নীপার দাফন ও মেয়েটির বাবা অক্ষয় কুমার রায় হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে মেয়ের সৎকারের জন্য নীলফামারী জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন।

 


আদালতে উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে নীপার মরদেহ তার শ্বশুরের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। ফলে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নীপার মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের হিমঘরেই থেকে যায়। এদিকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার আদেশে নীপার মরদেহ শ্বশুরের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিলেও সে আদেশের বিরুদ্ধে নীপার বাবা আপিল করেন।

 

এরপর জজ আদালত নীপার মরদেহ তার বাবার কাছেই হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।

 

কিন্তু সেই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন নীপার শ্বশুর। বৃহস্পতিবার সেই আবেদনের নিষ্পত্তি করে আদালত এ আদেশ দিলেন।