Bangladesh

People visits Uttra Ganobhaban

People visits Uttra Ganobhaban

| | 16 Apr 2018, 11:28 pm
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, এপ্রিল ১৭ : দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে নাটোরের উত্তরা গণভবন।

 ঐতিহ্যবাহী সব প্রাচীন নিদর্শনের সংগ্রহশালার সঙ্গে মিনি চিড়িয়াখানা আর সাপের অভয়ারণ্য স্থাপনের পাশাপাশি ৮০ ভাগ এলাকা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে ফুলে ফুলে সুশোভিত করায় এখন আড়াইশ বছরের পুরনো এই ভবনটি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। ফলে দিন দিন এখানে বাড়ছে দর্শনার্থীদের পদচারণা, সেই সঙ্গে বাড়ছে রাজস্ব আয়।


গণভবনের ৮০ ভাগ এলাকা এখন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। তাতে স্থান পেয়েছে বানর, ময়ূরসহ দেশি-বিদেশি পাখি। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে সাপের একটি অভয়ারণ্য। এছাড়া রানিমহলে লাগানো দেশি-বিদেশি আকর্ষণীয় ফুলের গাছগুলোতে ফুটে রয়েছে থোকা থোকা ফুল। মাঝে পায়ে হাঁটার রাস্তা রেখে উভয়দিকে ফুলের গাছ লাগানোর ফলে স্থানটি সহজেই দৃষ্টি কাড়ছে পর্যটকদের। পাশেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে লাগানো ‘হৈমন্তী’ গাছটিও এখন ফুলে ফুলে সুশোভিত।


নাটোর শহর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে ৪১.৫ একর জমির ওপর স্থাপিত গণভবনের প্রধান প্যালেস আর ইতালিয়ান গার্ডেনের মাঝের ভবনটিতে রয়েছে সংগ্রহশালা।

 

৩০ টাকার টিকেটের বিনিময়ে সংগ্রহশালটি ঘুরে দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। রাজা-রানির ছবি, রাজকুমারী ইন্দুমতির নিজ হাতে লেখা ২৮৫টি চিঠি, রাজপরিবারে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী, চাকাওয়ালা চেয়ার, টেবিল, সিংহাসন, দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের ইতিহাসের মতো ঐতিহাসিক সব নিদর্শন সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে।


সংগ্রহশালার করিডোরে রয়েছে রাজা প্রমদানাথ রায় ও সস্ত্রীক রাজা দয়ারাম রায়ের ছবি, সঙ্গে রাজবাড়ির সংক্ষিপ্ত বিবরণ। রয়েছে মার্বেল পাথরের রাজকীয় বাথটাব। রাজার পালঙ্ক, ঘূর্ণায়মান চেয়ার, টেবিল, আরাম চেয়ার আর ড্রেসিং টেবিল দিয়ে পাশের ঘরটি যেন রাজার শয়নকক্ষের প্রতিরূপ।


বাম পাশের দ্বিতীয় কক্ষে শোভা বাড়াচ্ছে রাজ সিংহাসন, রাজার মুকুট আর রাজার গাউন। আরও আছে মার্বেল পাথরের থালা, বাটি, কাচের জার, পিতলের গোলাপ জলদানি আর চিনামাটির ডিনার সেট। এই কক্ষে রয়েছে রাজপরিবারের লাইব্রেরির বই আর শেষ রাজা প্রতিভা নাথ রায়ের ইন্স্যুরেন্স বিষয়ক কাগজপত্র।


পাশের কক্ষটি রাজকুমারী ইন্দুপ্রভা চৌধুরানির বিভিন্ন সামগ্রীতে সুশোভিত। ইন্দুপ্রভার একটি ছবি রাখা হয়েছে পিতলের একটি ফ্রেমে। আছে তার ব্যক্তিগত ডায়েরি, আত্মজীবনী, পান্ডুলিপি, তার কাছে লেখা স্বামী মহেন্দ্রনাথ চৌধুরীর রাশি রাশি চিঠি। পাশেই রয়েছে চিঠিগুলো রাখার পিতলের সুটকেস। দর্শনার্থীদের জন্যে ইন্দুপ্রভার লেখা বঙ্গোপসাগর কবিতাটি ফ্রেমে বাঁধাই করে দেয়ালে টানানো হয়েছে। ৬৭ লাইনের এই কবিতায় তিনি বর্ণনা করেছেন বঙ্গোপসাগরের অপরূপ সৌন্দর্য।


এর বাইরেও সংগ্রহশালার ১০টি কক্ষের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের ব্যবহৃত দৃষ্টিনন্দন সব আসবাবপত্র। এর মধ্যে রয়েছে ডিম্বাকৃতি, গোলাকার, অষ্টভুজাকৃতি, চতুর্ভুজাকৃতি ছাড়াও দোতলা, প্রসাধনী ব্যবহারের উপযোগী ও কর্নার টেবিল। রয়েছে গার্ডেন ফ্যান কাম টি টেবিল।


নবসৌন্দর্যে বিমোহিত গণভবনের প্রধান প্যালেসের পাশের জলচৌকির আগাছাগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে, পরিষ্কার করা হয়েছে ভেতরের আম বাগানের আগাছাগুলোও। রাজপরিবারের সবজি বাগানটিকে ঘোষণা করা হয়েছে সাপের অভয়ারণ্য হিসেবে।


জানা যায়, ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে দয়ারাম রায় নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে রাজবাড়িটি ধ্বংসস্তুূপে পরিণত হয়। এরপর ১১ বছর ধরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, চিত্রশিল্পী ও কারিগরদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল হিসেবে গড়ে ওঠে আজকের এই নয়নাভিরাম রাজপ্রাসাদ।

 

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাস হওয়ার পর প্রাসাদটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে ১৯৬৬ সালে ইস্ট পাকিস্তান হাউস ও পরে ১৯৬৭ সালে গভর্নর হাউজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে রাত্রিযাপন করেন এবং এটিকে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চলীয় বাসভবন হিসেবে উত্তরা গণভবন নামকরণ করেন।