Bangladesh

Taraman Bibi no more

Taraman Bibi no more

Bangladesh Live News | @banglalivenews | 02 Dec 2018, 08:44 am
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ডিসেম্বর ২ঃ একাত্তরের রণাঙ্গনের বীরকন্যা বীরপ্রতীক তারামন বিবি আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) মধ্যরাত দেড়টায় কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার কাচরিপাড়ায় নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে বক্ষব্যাধিসহ নানা রোগে ভুগছিলেন তারামন বিবি।

স্বজনরা জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তারামন বিবির শারীরিক অবস্থার আবারও অবনতি হয়। তখন তাকে রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন বাড়িতেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন। রাত দেড়টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন তারামন বিবি।


উল্লেখ্য, বীর প্রতীক তারামন বিবির বাড়ি কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের কাচারী পাড়া শংকর মাধবপুর গ্রামে। বাবা আবদুস সোহবান এবং মা কুলসুম বিবি। তারামন বিবি ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ৩য় সন্তান। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার একই এলাকার বরকত আলীর ছেলে আবদুল মজিদের সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে।


১৯৭১ সালে তারামন বিবি নিজ গ্রামে ছিলেন। তখন ১১নং সেক্টরের নেতৃৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু ুতাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স ছিল মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর। কিন্তু পরবর্তীতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনা শেখান।


একদিন দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকবাহিনীর একটি গানবোট তাদের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন। এরপর তারামন অনেক সম্মুখ যুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন। অনেক বার তাদের ক্যাম্প পাকবাহিনী আক্রমণ করেছে, তবে ভাগ্যের জোরে তিনি প্রতিবার বেঁচে যান। যুদ্ধ শেষে ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তার সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।


বীর প্রতীক তারামন বিবির লাশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার বাড়ি থেকে লাশ নিয়ে আসা হয় রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ মাঠে। সেখানে বেলা ২টায় তাকে পুলিশ সুপারের নেতৃৃত্বে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর তার মরদেহে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। পরে জানাজা শেষে উপজেলার কাচারী পাড়া শংকর মাধবপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে শায়িত করা হয়।