Bangladesh

তিস্তায় পানি না থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য

তিস্তায় পানি না থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য

| | 23 Apr 2018, 06:16 am
২৩ এপ্রিল ২০১৮ : পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার এলাকার গজলডোবায় তিস্তা নদীতে সেচ প্রকল্প ব্যারাজ নির্মাণ করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশ অংশের লালমনিরহাটে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

 আন্তর্জাতিক এ নদীটির বাংলাদেশ অংশের বেশিরভাগে পড়েছে চর। পানির অভাবে সেচ প্রকল্প ব্যাহত হচ্ছে। এতে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা যেমন দেখা দিয়েছে, তেমনি স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ না থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে তিস্তা অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য। তিস্তা পানি চুক্তি না হলে এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
 

বাংলাদেশে তিস্তার প্রবেশপথ লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রম। প্রবশপথ থেকে হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ পর্যন্ত নদীতে পানিপ্রাহ প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ কিউসেক থাকলেও তিস্তা ব্যারাজের ভাটি থেকে লালমনিরহাট-রংপুরের কাউনিয়া এলাকা পর্যন্ত পানিপ্রবাহ ৩০০ থেকে ৪০০ কিউসেক। দহগ্রাম থেকে তিস্তা ব্যারাজ পর্যন্ত নদীতে পানি না থাকায় স্থানীয় কৃষকেরা তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে ভুট্টা ও মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছেন। সেচ প্রকল্পের জন্য পানি সরবরাহ করার কারণে হাতীবান্ধায় তিস্তা ব্যারাজের ভাটিতে পানি সংকট আরও তীব্র। তিস্তা ব্যারাজ থেকে লালমনিরহাট-কাউনিয়া এলাকা পর্যন্ত নদীতে পানি ঠেকেছে তলানিতে। ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদীটির বাংলাদেশ অংশের ১১৫ কিলোমিটারই কমবেশি পানি সংকটে ধুঁকছে।
 

বাংলাদেশের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে ভারত-বাংলাদেশ সরকার তিস্তা নদীর পানিবণ্টনে সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় বলা হয়, তিস্তার পানি শতকরা ভারত ৩৯ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ৩৬ শতাংশ পাবে। অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ পানি নদীতে সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু কীভাবে এই পানি ভাগাভাগি করা হবে, সে বিষয়ে কোনও দিকনির্দেশনা ছিল না। কিন্তু সে সিদ্ধান্তও আলোর মুখ দেখেনি। পরে ২০০৭ সালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে তিস্তার ৮০ শতাংশ পানি সমান অংশে ভাগ করে অবশিষ্ট ২০ শতাংশ পানি তিস্তা নদীর গতিধারা ঠিক রাখতে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে অসম্মতি জানান এবং তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির আলোচনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি ঝুলে থাকায় বাংলাদেশ অংশে ন্যায্য পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানির সংকটে তিস্তার আশপাশের জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে এবং জীববৈচিত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে সেচ প্রকল্প এলাকায় পানি সরবরাহ এবং তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ২০ হাজার কিউসেকের বেশি পানিপ্রবাহ থাকা প্রয়োজন। শুধু নদীর অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্যই প্রয়োজন চার হাজার কিউসেক পানি, সেখানে গড়ে দেড় হাজার কিউসেকে বেশি পানিপ্রবাহ পাওয়া যায় না।
 

ক্যাপশান: বাংলাদেশে তিস্তা নদীতে জেগেছে চর