Bangladesh

 নতুন পরিচয় পেল বাংলাদেশ, যুক্ত হতে চলেছে ডেভলপিং কান্ট্রির তালিকায়

নতুন পরিচয় পেল বাংলাদেশ, যুক্ত হতে চলেছে ডেভলপিং কান্ট্রির তালিকায়

| | 11 Mar 2018, 12:26 pm
ঢাকা, মার্চ ১১ : অবশেষে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের (ডেভলপিং কান্ট্রি) তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

অর্থনীতি ও সামাজিকভাবে ২০১৮ সালের মার্চেই এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।

 

উন্নয়নশীল দেশ বা ‘ডেভলপিং কান্ট্রি’ হতে যে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়, বাংলাদেশ তা অর্জন করেছে।

 

জাতিসংঘের মূল্যায়নের ভিত্তিতে নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে এ ঘোষণা অবশ্য কার্যকর হবে ২০২৪ সালে।

 

বিশ্বের ইকোনমিক ও সোশ্যাল কাউন্সিল এ ঘোষণা দেবে, যা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

 

এটি হবে একটি বড় অর্জন। তবে মধ্যবর্তী এ সময়ে বাংলাদেশের এই অর্জন বা অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উন্নয়নকে টেকসই করতে মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি সামাজিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রতি তিন বছর পর পর সূচক তৈরি করে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)।

 

তারই ভিত্তিতে বিশ্বের দেশগুলোকে ‘স্বল্পোন্নত দেশ’, ‘উন্নয়নশীল দেশ’ ও ‘উন্নত দেশ’ এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।

 

বিবেচনার সব সূচক অর্জন করেই দ্বিতীয় ধাপে পা রাখছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে সিডিপির ২০১৮ সালের মূল্যায়নে বাংলাদেশের এলডিসির তালিকা থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন এখন প্রায় নিশ্চিত।

 


সিডিপির ২০১৫ সালের মূল্যায়নে দেখা গেছে, উন্নয়নশীল দেশ হতে অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচকে ৩২ পয়েন্ট বা তার নিচে থাকতে হয়।

 

এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ২৫ দশমিক ১ পয়েন্টে।

 

মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে ৬৬ বা এর বেশি পয়েন্ট পেতে হয়।

 

এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৩ দশমিক ৮ পয়েন্টে।

 

আর মাথাপিছু আয় হতে হয় এক  হাজার ২৪২ মার্কিন ডলার। অ্যাটলাস পদ্ধতিতে করা বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৯২৩ ডলার।

 


তবে ২০১৮ সালে জাতিসংঘের সিডিপির সঙ্গে সরকারের বৈঠকে দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অর্জিত পয়েন্ট হবে ৭২ দশমিক ৮।

 

অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচক নেমে দাঁড়িয়েছে ২৫ পয়েন্টে। আর মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে এক  হাজার ২৭২ ডলারে। সে অনুযায়ী তিন সূচকেই উত্তীর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশ।

 

জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিলের মূল্যায়ন কমিটির সভা এ মাসেই অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই ডেভলপিং কান্ট্রি হিসেবে ঘোষণার বিষয়টি আলোচিত হবে।

 

আশা করা যায়, এই কাউন্সিল যথাযথ ঘোষণাই দেবে। এ ঘোষণা কার্যকর হতে প্রস্তুতির সময় থাকবে। সেই সময় নিয়েই ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি সূবর্ণ জয়ন্তীতে বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের পরিচয়ে পরিচিতি পাবে বাংলাদেশ।’

 

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্বীকৃতি পেলেও বৈশ্বিক স¤প্রদায় আগামী ১৫ বছর বাংলাদেশের এই উত্তরণকে খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। বাংলাদেশের এই উত্তরণ হবে একমুখী প্রক্রিয়া। কেননা, ধারণাগতভাবে উত্তরণের পর আবার এলডিসিতে ফিরে যাওয়া সম্ভব হলেও যেসব দেশের জনসংখ্যা সাড়ে সাত কোটির বেশি, সেসব দেশের জন্য তা প্রযোজ্য নয়।

 

তাই বাংলাদেশের আর পিছু ফেরার সুযোগ নেই।

 

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) করা ভবিষ্যদ্বাণী হলো- ২০১৮ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গতি আসবে।

 

যথাযথ প্রস্তুতি নিলে বাংলাদেশ তার সুফল নিতে পারবে।

 

বাংলাদেশের এই অর্জনে এখন করণীয় কী জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে প্রযুক্তির আধুনিকায়ন এবং দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

 

এখনও বাংলাদেশের তিন কোটি মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে।

 

অর্থনীতি এখনও পুরোপুরি শিল্পায়িত হয়নি।

 

এই পরিপ্রেক্ষিতে রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি পরিস্থিতি নির্ভর অর্থনীতি থেকে উৎপাদনশীলতা নির্ভর অর্থনীতির দিকে যেতে হবে।

 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে এই উত্তরণ প্রক্রিয়া শুরু হলেও ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের বাণিজ্য সুবিধা পাবে।