Bangladesh

কাঁটাতারের বেড়ার কারণে দেখা হলো, জড়িয়ে ধরা হলো না

কাঁটাতারের বেড়ার কারণে দেখা হলো, জড়িয়ে ধরা হলো না

| | 16 Apr 2018, 11:22 pm
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, এপ্রিল ১৭ : প্রাায় ৪০ বছর পর দেখা হলো দুই ভাইয়ের। একে-অপরকে ছুঁয়ে দেখলেন তারা। হলো কুশলবিনিময়ও।

তারপর চিৎকার করে অনেক দিনের জমানো কথা বিনিময় করলেন। আনন্দে-আবেগে হাউ-মাউ করে কাঁদলেনও দুজন। কিন্তু পরস্পরকে জড়িয়ে ধরার সৌভাগ্য হলো না তাদের। কেননা, দুজনের মধ্যে ব্যবধান তৈরি করে দিয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।


বেড়ার এপাশে (বাংলাদেশে) হরমোহন (৬০)। ওপাশে (ভারতে) প্রহ্লাদ বর্মন (৭০)।

 

একজন এসেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চন্ডিপুর থেকে, অপরজন ভারতের শিলিগুড়ির জলডুম ফাড়াবাড়ি এলাকা থেকে। ভাই-ভাইয়ে দীর্ঘদিন পর দেখা হলো পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ার সুকানি সীমান্তে। কিছুক্ষণ পরপরই দুজনই থেমে থেমে কাঁদলেন। কিন্তু প্রবল ইচ্ছা থাকলেও ভাইকে বুকে টেনে নিতে পারেননি।


পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার অমরখানা ও মাগুরমারী এবং তেতুলিয়া উপজেলার সুকানি ও ভুতিপুকুর সীমান্তে রবিবার (১৫ এপ্রিল) বসেছিল দুই বাংলার মানুষের মিলনমেলা। ক্ষণিকের জন্য হলেও দীর্ঘদিন পর দুই দেশের মানুষ স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হলেন, বিদায়ের সময় আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়লেন অনেকেই।

 

প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে এই চার সীমান্তে মিলনমেলা বসে। তবে এবার ভারতের বৈশাখের প্রথম দিন রবিবার এসব সীমান্তে মিলনমেলা বসলো। প্রত্যেকটি সীমান্তে ছিল হাজারও মানুষের উপচে পড়া ঢল। সীমান্ত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই দেশের সাধারণ লোকজন, যারা অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারেন না, তারা এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন।


ভারতে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে রবিবার সকাল থেকে সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলার চারটি সীমান্ত পয়েন্টে এসে জড়ো হন পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার দর্শনার্থীরা। অন্যদিকে, বাংলাদেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে কাঁটাতারের অপরপাশে জড়ো হন জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার এবং শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ, চোপরাসহ বিভিন্ন এলাকার ভারতীয় নাগরিকরাও।


সকাল ১০টা থেকে অমরখানা ও মাগুরমারী এবং সুকানি ও ভুতিপুকুর সীমান্তে এ মিলনমেলা শুরু হয়, চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পর কাছের মানুষদের দেখতে পেয়ে দর্শনার্থীরা কাঁটাতারের বেড়ার বাঁধা ভুলে যান। বেড়ার ফাঁক গলিয়ে একে-অন্যের হাত ধরেন, কথা বলেন। বিনিময় করেন নানান উপহার। কেউ কেউ আবার কেঁদে ভাসান আবেগে।


ভারতের মাটিগাড়ায় থাকা ভাই নিজেন্দ্রনাথ (৬০) ও ভুষেন্দ্রনাথের (৩৫) সঙ্গে দেখা করতে আসা পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বোয়ালমারীর রাজেন্দ্রনাথ (৫৫) জানান, প্রতিবছর বাংলা নববর্ষে ওপার বাংলায় থাকা ভাইদের দেখার, খোঁজখবর নেওয়ার সুযোগ পাই।

 

জলপাইগুড়ির কালিবাড়ী পান্ডাপারায় বাচ্চাবালা নামে তার অপর এক বোন থাকেন।

 

তার সঙ্গেও দেখা হয়েছে।

 

বোদা উপজেলার কাদেরপুর ময়দানদিঘী থেকে আসা ৯০ বছরের প্রসন্ন কুমার ভারতের চোপড়া পথানার দাসপাড়ায় থাকা বোন সনেকার (৪০) সঙ্গে দেখা করেন।